পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিত্রা > > o নীরবে রমণী আবৃত বদনে বসিলা শয্যাপরে, অঙ্গুলি তুলি ইঙ্গিত করি পাশে বসাইল মোরে । হিম হয়ে এল সর্বশরীর, শিহরি উঠিল প্রাণ— শোণিতপ্রবাহে ধ্বনিতে লাগিল ভয়ের ভীষণ তান । সহসা বাজিয়া বাজিয়া উঠিল দশ দিকে বীণা-বেণু, মাথার উপরে ঝরিয়া ঝরিয়া পড়িল পুষ্পরেণু। দ্বিগুণ আভায় জলিয়া উঠিল দীপের আলোকরাশি– ঘোমটা-ভিতরে হাসিল রমণী মধুর উচ্চহাসি। সে হাসি ধ্বনিয়া ধ্বনিয়া উঠিল বিজন বিপুল ঘরে— শুনিয়া চমকি ব্যাকুল হৃদয়ে কহিলাম জোড়করে, ‘আমি যে বিদেশী অতিথি, আমায় ব্যথিয়ে না পরিহাসে, কে তুমি নিদয় নীরব ললনা কোথায় আনিলে দাসে। অমনি রমণী কনকদও আঘাত করিল ভূমে, আঁধার হইয়া গেল সে ভবন রাশি রাশি ধূপধূমে। বাজিয়া উঠিল শতেক শম্ব হুলুকলরব-সাথে— প্রবেশ করিল বৃদ্ধ বিপ্ৰ ধান্তদূর্ব হাতে। পশ্চাতে তার বাধি দুই সার কিরাতনারীর দল কেহ বহে মালা, কেহ বা চামর, কেহ বা তীৰ্থজল । নীরবে সকলে দাড়ায়ে রহিল— বৃদ্ধ আসনে বসি নীরবে গণনা করিতে লাগিল গৃহতলে খড়ি কষি। আঁকিতে লাগিল কত না চক্র, কত না রেখার জাল, গণনার শেষে কহিল 'এখন হয়েছে লগ্ন-কাল’ । শয়ন ছাড়িয়া উঠিল রমণী বদন করিয়া নত, আমিও উঠিয়া দাড়াইচু পাশে মন্ত্রচালিতমত। নারীগণ সবে ঘেরিয়া দাড়ালো একটি কথা না বলি দোহাকার মাথে ফুলদল-সাথে বরধি লাজাঞ্জলি। পুরোহিত শুধু মন্ত্ৰ পড়িল আশিস করিয়া দোহে— কী ভাষা কী কথা কিছু না বুৰিন্থ, দাড়ায়ে রহিম মোহে।