পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী অজানিত বন্ধু নীরবে সঁপিল শিহরিয়া কলেবর হিমের মতন মোর করে তার তপ্ত কোমল কর । চলি গেল ধীরে বৃদ্ধ বিপ্ৰ, পশ্চাতে বাধি সার গেল নারীদল মাথায় কক্ষে মঙ্গল-উপচার। শুধু এক সখী দেখাইল পথ হাতে লয়ে দ্বীপখানি— মোরা দোহে পিছে চলিহু তাহার, কারো মুখে নাহি বাণী । কত না দীর্ঘ আঁধার কক্ষ সভয়ে হইয়া পার সহসা দেখিন্থ সমুখে কোথায় খুলে গেল এক দ্বার। কী দেখিছু ঘরে কেমনে কহিব হয়ে যায় মনোভুল, নানা বরনের আলোক সেথায়, নানা বরনের ফুল । কনকে রজতে রতনে জড়িত বসন বিছানো কত, মণিবেদিকায় কুসুমশয়ন স্বপ্নরচিত-মতে । পাদপীঠ’পরে চরণ প্রসারি শয়নে বসিলা বধু— আমি কহিলাম, সব দেখিলাম, তোমারে দেখিনি শুধু।” চারি দিক হতে বাজিয়া উঠিল শত কৌতুকহাসি । শত ফোয়ারায় উছসিল যেন পরিহাস রাশি রাশি । স্বধীরে রমণী দু-বাহু তুলিয়, অবগুণ্ঠনখানি উঠায়ে ধরিয়া মধুর হাসিল মুখে না কহিয়া বাণী । চকিত নয়ানে হেরি মুখপানে পড়িয় চরণতলে, এখানেও তুমি জীবনদেবতা ! কহিস্থ নয়নজলে । সেই মধুমুখ, সেই মৃদুহাসি, সেই স্বধাভরা জাখি— চিরদিন মোরে হাসালে কাদালো, চিরদিন দিল ফাকি । খেলা করিয়াছে নিশিদিন মোর সব স্বখে সব দুখে, এ অজানাপুরে দেখা দিল পুন সেই পরিচিত মুখে । অমল কোমল চরণকমলে চুমিছু বেদনাভরে— বাধা না মানিয়া ব্যাকুল অশ্র পড়িতে লাগিল করে। অপরূপ তানে ব্যথা দিয়ে প্রাণে বাজিতে লাগিল বাশি । বিজন বিপুল ভবনে রমণী হাসিতে লাগিল হালি । । ২০ ফাত্তন, ১৩০২