পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রজাপতির নির্বন্ধ ૨૨૯ শৈল কহিল, “ছি মুখুজোমশায়, তুমি সেকেলে হয়ে যাচ্ছ। ওই সব নয়ন-বাণ-টানগুলোর এখন কি আর চলন আছে ? যুদ্ধবিস্তার ষে এখন অনেক বদল হয়ে গেছে।” ইতিমধ্যে দুই বোন নৃপবালা, নীরবাল, ষোড়শী এবং চতুর্দশী, প্রবেশ করিল। নৃপ শাস্ত স্নিগ্ধ ; নীক তাহার বিপরীত, কৌতুকে এবং চাঞ্চল্যে সে সর্বদাই আন্দোলিত । নীর অসিয়াই শৈলকে জড়াইয়া ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মেজদিদি ভাই, আজ কারা আসবে বলে তো ?” নৃপবালা । মুখুজোমশায়, আজ কি তোমার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ আছে ? জলখাবারের আয়োজন হচ্ছে কেন ? অক্ষয়। ওই তো ! বই পড়ে পড়ে চোখ কানা করলে— পৃথিবীর আকর্ষণে উদ্ধাপাত কী করে ঘটে সে-সমস্ত লাখ দু-লাখ ক্রোশের খবর রাখ, আর আজ ১৮ নম্বর মধুমিস্ত্রির গলিতে কার আকর্ষণে কে এসে পড়ছে সেটা অনুমান করতেও পারলে না ! নীরবালা। বুঝেছি ভাই সেজদিদি – বলিয়া নৃপর পিঠে একটা চাপড় মারিল এবং তাহার কানের কাছে মুখ রাখিয়া অল্প একটু গল নামাইয়া কহিল, “তোর বর আসছে ভাই, তাই সকালবেলা আমার বা চোখ নাচছিল।” নৃপ তাহাকে ঠেলিয়া দিয়া কহিল, “তোর বা চোখ নাচলে আমার বর আসবে কেন ?” নীরু কহিল, “তা ভাই, আমার বা চোখটা নাহয় তোর বরের জন্তে নেচে নিলে তাতে আমি দুঃখিত নই। কিন্তু মুখুজ্যেমশায়, জলখাবার তো দুটি লোকের জন্তে দেখলুম, মেজদিদি কি স্বয়ম্বর হবে না কি ?” অক্ষয় । আমাদের ছোড়দিদিও বঞ্চিত হবেন না। নীরবাল । আহা মুখুজোমশায়, কী স্বসংবাদ শোনালে ? তোমাকে কী বকশিশ দেব। এই নাও আমার গলার হার, অামার দু-হাতে বালা । শৈল ব্যস্ত হইয়। বলিল, “আঃ ছিঃ, হাত খালি করিসনে ৷” নীরবালা। আজ আমাদের বরের অনারে পড়ার ছুটি দিতে হবে মুখুজোমশায় । নৃপবালা। জাঃ কী বর-বর করছিল। দেখো তো ভাই মেজদিদি ! অক্ষয়। ওকে ওইজন্তেই তো বর্বর নাম দিয়েছি। অয়ি বর্বরে, ভগবান তোমাদের কটি সহোদরাকে এই একটি অক্ষয় বর দিয়ে রেখেছেন তবু তৃপ্তি নেই ? নীরবালা। সেই জন্তেই তো লোভ আরও বেড়ে গেছে।