পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮১

প্রজাপতির নির্বদ্ধ 及@> কিন্তু শরৎসন্ধ্যার নির্মল জ্যোৎস্নার স্বারা আবিষ্ট হইয়া নড়িতে পারিতেছিল না। একটি মাস বরফশীতল লেমনেড ও কুন্দকুলের মালা জানাইয়া জ্যোৎস্নাশুভ্র আকাশে সিগারেটের ধুম-সহযোগে বিচিত্র কল্পনাকুগুলী নির্মাণ করিতেছিল। ঐশ। আচ্ছ ভাই, শিশুপালক, তুমি কি সত্যি মনে কর আমি সন্ন্যাসী হতে পারিনে ? বিপিন। কেন পারবে না । কিন্তু অনেকগুলি তল্পিদার চেলা সঙ্গে থাকা চাই। ঐশ। তার তাৎপর্ব এই যে, কেউ বা আমার বেলফুলের মালা গেঁথে দেবে, কেউ বা বাজার থেকে লেমনেড ও বরফ ভিক্ষে করে আনবে, এই তো ? তাতে ক্ষতিটা কী ? যে সন্ন্যাসধর্মে বেলফুলের প্রতি বৈরাগ্য এবং ঠাণ্ড লেমনেডের প্রতি বিতৃষ্ণ জন্মায় সেটা কি খুব উচুদরের সন্ন্যাস ? বিপিন। সাধারণ ভাষায় তো সন্ন্যাসধর্ম বলতে সেই রকমটাই বোঝায়। ঐশ। ওই শোনো ! তুমি কি মনে কর, ভাষায় একটা কথার একটা বই অর্থ নেই? এক জনের কাছে সন্ন্যাসী কথাটার যে অর্থ, আর-এক জনের কাছেও যদি ঠিক সেই অর্থই হয় তা হলে মন বলে একটা স্বাধীন পদার্থ আছে কী করতে ? বিপিন । তোমার মন সন্ন্যাসী কথাটার কী অর্থ করছেন আমার মন সেইটি শোনবার জন্ত উৎসুক হয়েছেন। জীশ । আমার সন্ন্যাসীর সাজ এইরকম— গলায় ফুলের মালা, গায়ে চন্দন, কানে কুগুল, মুখে হাস্ত। আমার সন্ন্যাসীর কাজ মাহুষের চিত্ত-আকর্ষণ। সুন্দর চেহারা, মিষ্টি গল, বক্তৃতায় অধিকার, এ সমস্ত না থাকলে সন্ন্যাসী হয়ে উপযুক্ত ফল পাওয়া যায় না। রুচি বুদ্ধি কার্যক্ষমতা ও প্রফুল্লতা, সকল বিষয়েই আমার সন্ন্যাসীসম্প্রদায়কে গৃহস্থের আদর্শ হতে হবে। বিপিন। অর্থাৎ, এক দল কাতিককে ময়ূরের উপর চড়ে রাস্তায় বেরোতে হবে। ঐশ। ময়ূর না পাওয়া যায়, ট্রাম আছে, পদব্রজেও নারাজ নই। কুমারসভা মানেই তো কার্তিকের সভা। কিন্তু কাতিক কি কেবল স্থপুরুষ ছিলেন ? তিনিই ছিলেন স্বর্গের সেনাপতি । বিপিন। লড়াইয়ের জন্তে তার দুটিমাত্র হাত, কিন্তু বকৃত করবার জন্তে তার তিন-জোড়া মুখ। ঐশ। এর থেকে প্রমাণ হয়, আমাদের জার্ধ পিতামহরা বাহুবল অপেক্ষ বাক্যবলকে তিনগুণ বেশি বলেই জানতেন। আমিও পালোয়ানিকে বীরত্বের আদর্শ বলে মানিনে । . .