পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७० রবীন্দ্র-রচনাবলী বিপিন। ওটা বুঝি আমার উপর হল ? ঐশ। ওই দেখো! মানুষকে অহংকার কিরকম মাটি করে! তুমি ঠিক করে রেখেছ, পালোয়ান বললেই তোমাকে বলা হল। তুমি কলিযুগের ভীমসেন! আচ্ছা এস, যুদ্ধং দেহি! এক বার বীরত্বের পরীক্ষা হয়ে যাক। # এই বলিয়া দুই বন্ধু ক্ষণকালের জন্য লীলাচ্ছলে হাত-কাড়াকড়ি করিতে লাগিল । বিপিন হঠাৎ “এইবার ভীমসেনের পতন” বলিয়া ধপ, করিয়া শ্ৰীশের কেদারাটা অধিকার করিয়া তাহার উপরে দুই পা তুলিয়া দিল ; এবং “উঃ অসহ তৃষ্ণা” বলিয়৷ লেমনেডের মাসটি এক নিশ্বাসে খালি করিল। তখন শ্ৰীশ তাড়াতাড়ি কুন্দকুলের মালাটি সংগ্ৰহ করিয়া “কিন্তু বিজয়মাল্যটি আমার” বলিয়া সেটা মাথায় জড়াইল এবং বেতের মোড়াটার উপরে বসিয়া কহিল, “আচ্ছা ভাই, সত্যি বলে, এক দল শিক্ষিত লোক যদি এই রকম সংসার পরিত্যাগ করে পরিপাটি সজ্জায় প্রফুল্ল প্রসন্ন মুখে গানে এবং বক্তৃতায় ভারতবর্ষের চতুর্দিকে শিক্ষা বিস্তার করে বেড়ায় তাতে উপকার হয় কি না ?” বিপিন এই তর্কটা লইয়া বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করিতে ইচ্ছা করিল না। কহিল, *আইডিয়াটা ভালো বটে ।” ঐশ। অর্থাং, শুনতে সুন্দর কিন্তু করতে অসাধ্য ! আমি বলছি অসাধ্য নয় এবং আমি দৃষ্টাস্ত-দ্বারা তার প্রমাণ করব। ভারতবর্ষে সন্ন্যাসধর্ম বলে একটা প্রকাও শক্তি আছে ; তার ছাই ঝেড়ে, তার ঝুলিটা কেড়ে নিয়ে, তার জটা মুড়িয়ে, তাকে সৌন্দর্ষে এবং কর্মনিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত করাই চিরকুমার-সভার একমাত্র উদ্দেশু। ছেলে পড়ানো এবং দেশালাইয়ের কাঠি তৈরি করবার জন্তে আমাদের মতো লোক চিরজীবনের ব্রত অবলম্বন করেনি। বলে বিপিন, তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি আছ কি না ? বিপিন । তোমার সন্ন্যাসীর যে-রকম চেহারা গলা এবং আসবাবের প্রয়োজন আমার তো তার কিছুই নেই। তবে তল্পিদার হয়ে পিছনে যেতে রাজি আছি। কানে যদি সোনার কুণ্ডল, অস্তত চোখে যদি সোনার চশমাটা, পরে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াও তা হলে একটা প্রহরীর দরকার— সে কাজটা আমার দ্বারা কতকটা চলতে পারবে । ? ঐশ। আবার ঠাট । বিপিন। না ভাই, ঠাট্ট নয়। আমি সত্যিই বলছি, তোমার প্রস্তাবটাকে যদি সম্ভবপর করে তুলতে পার তা হলে খুব ভালোই হয়। তবে এরকম একটা