পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$48 রবীন্দ্র-রচনাবলী ঐশ অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া কহিল, "উপমা তো আর যুক্তি নয় যে সেটাকে খণ্ডন করলেই আমার কথাটাকে খণ্ডন করা হল। উপমা কেবল খানিক দূর পর্যন্ত খাটে”— বিপিন। অর্থাৎ যতটুকু কেবল তোমার যুক্তির পক্ষে খাটে। এই দুই পরম বন্ধুর মধ্যে এমন বিবাদ সর্বদাই ঘটিয়া থাকে। পূর্ণ অত্যন্ত বিমন। হইয়া বসিয়াছিল ; সে কহিল, “বিপিনবাবু, আমার মত এই যে, আমাদের এই-সকল কাজে মেয়েরা অগ্রসর হয়ে এলে তাতে তাদের মাধুর্য নষ্ট হয়।” চন্দ্রবাৰু একখানা বই চক্ষের অত্যন্ত কাছে ধরিয়া কহিলেন, "মহৎ কার্ধে যে মাধুর্য নষ্ট হয় সে মাধুর্য সযত্বে রক্ষা করবার যোগ্য নয়।” ঐশ বলিয়া উঠিল, “না চন্দ্রবাবু, আমি ও-সব সৌন্দৰ্য-মাধুর্ষের কথা আনছিই নে। সৈন্যদের মতো এক চালে আমাদের চলতে হবে, অনভ্যাস বা স্বাভাবিক দুর্বলতা -বশত যাদের পিছিয়ে পড়বার সম্ভাবনা আছে তাদের নিয়ে ভারগ্রস্ত হলে আমাদের সমস্তই ব্যর্থ হবে।” এমন সময় নির্মলা অকুষ্ঠিত মর্যাদার সহিত গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া নমস্কার করিয়া দাড়াইল। হঠাৎ সকলেই স্তম্ভিত হইয়া গেল। যদিচ একটা অশ্রীপূর্ণ ক্ষোতে তাহার কণ্ঠস্বর আর্দ্র ছিল তথাপি সে দৃঢ় স্বরে কহিল, “আপনাদের কী উদ্বেগু এবং আপনার দেশের কাজে কতদূর পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত আছেন তা আমি কিছুই জানি নে— কিন্তু আমি আমার মামাকে জানি, তিনি যে পথে যাত্রা করে চলেছেন আপনার কেন অামাকে সে পথে র্তার অনুসরণ করতে বাধা দিচ্ছেন ?” ঐশ নিরুত্তর, পূর্ণ কুষ্ঠিত অমৃতপ্ত, বিপিন প্রশাস্ত গভীর, চক্রবাবু স্বগতীর চিন্তামগ্ন । পূর্ণ এবং প্রশের প্রতি বর্ষার রৌদ্ররশ্মির ন্যায় অশ্রজলস্নাত কটাক্ষপাত করিয়া নির্মলা কহিল, “আমি যদি কাজ করতে চাই— যিনি আমার আশৈশবের গুরু, মৃত্যু পর্যস্ত যদি সকল শুভচেষ্টায় তার অঙ্কুবর্তিনী হতে ইচ্ছা করি, আপনারা কেবল তর্ক করে আমার অযোগ্যতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন কেন ? আপনারা অামাকে কী জানেন ।” ঐশ স্তব্ধ। পূর্ণ ঘর্মাক্ত। নির্মল। আমি আপনাদের কুমারসভা বা অন্ত কোনো সভা জানি নে, কিন্তু ধায় শিক্ষায় আমি মানুষ হয়েছি তিনি যখন কুমারসভাকে অবলম্বন করেই তার জীবনের সমস্ত উদ্দেশু-সাধনে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন এই কুমারসভা থেকে আপনার জামাকে দূরে রাখতে পারবেন না। (চক্রবাবুর দিকে ফিরিয়া) তুমি যদি বল আমি তোমার