পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০১

প্রজাপতির নির্বন্ধ । SAS পরিমল যেন পরিত্যক্ত আসবাবগুলির মধ্যে আপনার পুরাতন আশ্রয়গুলিকে খুজিয়ী নিশ্বাস ফেলিয়া বেড়াইতে লাগিল । বিজ্ঞানশাস্ত্রে বলে শক্তির অপচয় নাই, রূপান্ডর আছে। ঘর হইতে হঠাৎ তিন ভগিনীর পলায়নে বাতাসে ষে একটি স্বগন্ধ আন্দোলন উঠিয়াছিল সেটা কি প্রথমে কুমারযুগলের বিচিত্র স্বায়ুমণ্ডলীর মধ্যে একটি নিগৃঢ় স্পন্দন ও অব্যবহিত পরেই র্তাহাদের অস্তকরণের দিকৃপ্রান্তে ক্ষণকালের জন্ত একটি অনির্বচনীয় পুলকে পরিণত হয় নাই ? কিন্তু সংসারের যেখান হইতে ইতিহাস শুরু হয় তাহার অনেক পরের অধ্যায় হইতে লিখিত হইয়া থাকে— প্রথম স্পর্শ স্পন্দন আন্দোলন ও বিদ্যুৎচমকগুলি প্রকাশের অতীত । পরস্পর নমস্কারের পর অক্ষয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “পূর্ণবাৰু এলেন না যে ?” ঐশ। চন্দ্রবাবুর বাসায় তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ তার শরীরটা খারাপ হয়েছে বলে আজ আর আসতে পারলেন না । , অক্ষয় । ( পথের দিকে চাহিয়া) একটু বন্ধন— আমি চন্দ্রবাবুর অপেক্ষায় দ্বারের কাছে গিয়ে দাড়াই । তিনি অন্ধ মানুষ, কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে পড়বেন তার ঠিক নেই– কাছাকাছি এমন স্থানও আছে যেখানে কুমারসভার অধিবেশন কোনোমতেই প্রার্থনীয় নয়। বলিয়া অক্ষয় নামিয়া গেলেন। অাজ চন্দ্রবাবুর বাসায় হঠাৎ নির্মলা আবির্ভূত হইয়া চিরকুমারদলের শাস্ত মনের মধ্যে যে একটা মন্থন উৎপন্ন করিয়া দিয়াছিল তাহার অভিঘাত বোধ করি এখনো ঐশের মাথায় চলিতেছিল। দৃশুটি অপূর্ব, ব্যাপারটি অভাবনীয়, এবং নির্মলার কমনীয় মুখে ষে-একটি দীপ্তি ও তাহার কথাগুলির মধ্যে যে-একটি আস্তরিক আবেগ ছিল তাহাতে তাহাকে বিস্মিত ও তাহার চিন্তার স্বাভাবিক গতিকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিয়াছে। সে লেশমাত্র প্রস্তুত ছিল না বলিয়া এই আকস্মিক আঘাতেই বিপর্যন্ত হইয়া পড়িয়াছে। তর্কের মাঝখানে হঠাৎ এমন জায়গা হইতে এমন করিয়া এমন একটা উত্তর আসিয়া উপস্থিত হইবে স্বপ্নেও মনে করে নাই বলিয়াই উত্তরটা তাহার কাছে এমন প্রবল হইয়া উঠিল। উত্তরের প্রত্যুত্তর থাকিতে পারে, কিন্তু সেই আবেগকম্পিত ললিতকণ্ঠ— সেই গৃঢ়-অঞ্জ-করুণ বিশাল কৃষ্ণচক্ষুর দীপ্তিচ্ছটার প্রত্যুত্তর কোথায় ? পুরুষের মাথায় ভালো ভালো যুক্তি থাকিতে পারে, কিন্তু ষে জারত্ত অধর কথা বলিতে গিয়া ফুরিত হইতে থাকে, ষে কোমল কপোল ছটি দেখিতে দেখিতে ভাবের জাতালে করুণাভ হইয় উঠে, তাহার বিরুদ্ধে দাড় করাইতে পারে পুরুষের হাতে এমন কী আছে ? ...