পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९४-8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ঐশ দেখিল কণ্ঠস্বরটিও অবলা নামের উপযুক্ত। কহিল, “এই সভ্যটর আকৃতি নিরীক্ষণ করে দেখলেই ও সম্বন্ধে কোনো সংশয় থাকবে না।” বলিয়া বিপুলায়তন বিপিনকে টানিয়া আনিল । বিপিন কহিল, “নিয়মের কথা যদি বলেন অবলাকাস্তবাবু, সংসারের শ্রেষ্ঠ জিনিসমাত্রই নিজের নিয়ম নিজে হৃষ্টি করে। ক্ষমতাশালী লেখক নিজের নিয়মে চলে, শ্ৰেষ্ঠ কাব্য সমালোচকের নিয়ম মানে না। যে মিষ্টান্নগুলি সংগ্রহ করেছেন এর সম্বন্ধেও কোনো সভার নিয়ম খাটতে পারে না— এর একমাত্র নিয়ম, বসে যাওয়া এবং নিঃশেষ করা । ইনি যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ জগতের অন্ত সমস্ত নিয়মকে স্বারের কাছে অপেক্ষা করতে হবে।” - শ্ৰীশ কহিল, “তোমার হল কী বিপিন ? তোমাকে খেতে দেখেছি বটে, কিন্তু এক নিশ্বাসে এত কথা কইতে শুনি নি তো ।” বিপিন । রসনা উত্তেজিত হয়েছে, এখন সরস বাক্য বলা আমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হয়েছে। যিনি আমার জীবনবৃত্তাস্ত লিখবেন, হায়, এ সময়ে তিনি কোথায় ? রসিক টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে কহিলেন, “আমার দ্বারা সে কাজটা প্রত্যাশা করবেন না, আমি অত দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে পারব না।” নূতন ঘরের বিলাসসজ্জার মধ্যে আসিয়া চন্দ্রমাধববাবুর মনটা বিক্ষিপ্ত হইয়া গিয়াছিল। র্তাহার উৎসাহস্ৰোত যথাপথে প্রবাহিত হইতেছিল না। তিনি ক্ষণে ক্ষণে কার্যবিবরণের খাতা, ক্ষণে ক্ষণে নিজের করকোষ্ঠী অকারণে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছিলেন। শৈল তাহার সম্মুখে গিয়া সবিনয়ে নিবেদন করিল, “সভার কার্ষের যদি কিছু ব্যাঘাত করে থাকি তো মাপ করবেন, চন্দ্রবাবু, কিছু জলযোগ— ” চন্দ্রবাবু শৈলকে নিকটে পাইয় তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “এ-সমস্ত সামাজিকতায় সভার কার্যের ব্যাঘাত করে, তাতে সন্দেহ নেই ।” রসিক কহিলেন, “আচ্ছ, পরীক্ষা করে দেখুন মিষ্টারে যদি সভার কার্ধ রোধ হয় তা হলে—” বিপিন মৃদুস্বরে কহিল, “তা হলে ভবিষ্যতে নাহয় সভাটা বন্ধ রেখে মিষ্টায়টা চালালেই হবে।” o চন্দ্রবাবু নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে দেখিতে শৈলের সুন্দর স্বকুমার চেহারাটি কিয়ংপরিমাণে আয়ত্ত করিয়া লইলেন। তখন শৈলকে ক্ষুঃ করিতে র্তাহার আর প্রবৃত্তি হইল না।