পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রজাপতির নির্বন্ধ ২৮৫ বলা আবশ্বক, অচিরকাল পূর্বেই বিপিন জলযোগ করিয়াই বাড়ি হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল। তাহার ভোজনের ইচ্ছামাত্র ছিল না, কিন্তু এই প্রিয়দর্শন কুমারটিকে দেখিয়া, বিশেষত তাহার মুখের অত্যন্ত কোমল একটি স্থিতহাস্তে, বিপুলবলশালী বিপিনের চিত্ত হঠাৎ এমনি স্বেহাৰুষ্ট হইয়া পড়িল যে, অস্বাভাবিক মুখরতার সহিত মিষ্টারের প্রতি সে অতিরিক্ত লোলুপত প্রকাশ করিল। রোগভীরু ঐশের অসময়ে খাইবার সাহস ছিল না, তাহারও মনে হইল, না খাইতে বসিলে এই তরুণ কুমারটির প্রতি কঠিন রূঢ়তা করা হইবে। ঐশ কহিল, "আন্ধন রসিকবাৰু, আপনি উঠছেন না যে!” রসিক । রোজ রোজ যেচে এবং মাঝে মাঝে কেড়ে খেয়ে থাকি, আজ চিরকুমার-সভার সভ্যরূপে আপনাদের সংসৰ্গগৌরবে কিঞ্চিৎ উপরোধের প্রত্যাশায় ছিলুম, কিন্তু— শৈল। কিন্তু আবার কী রসিকদাদা ? তুমি যে রবিবার করে থাক, আজ তুমি কিছু খাবে নাকি ? রসিক। দেখেছেন মশায় ! নিয়ম আর কারও বেলায় না, কেবল রসিকদাদার বেলায় ! না:– বলং বলং বাহুবলম্‌! উপরোধ-অনুরোধের অপেক্ষা করা নয়। বিপিন । ( চারটিমাত্র ভোজনপাত্ৰ দেখিয়া ) আপনি আমাদের সঙ্গে বসবেন না ! শৈল। না, আমি আপনাদের পরিবেষণ করব । ঐশ উঠিয়া কহিল, “সে কি হয় ।” শৈল কহিল, “আমার জন্যে আপনারা অনেক অনিয়ম সহ করেছেন, এখন আমার আর একটিমাত্র ইচ্ছা পূর্ণ করুন। আমাকে পরিবেষণ করতে দিন, খাওয়ার চেয়ে তাতে আমি ঢের বেশি খুশি হব।” ঐশ। রসিকবাৰু, এটা কি ঠিক হচ্ছে ? রসিক । ভিন্নরুচিহি লোকঃ । উনি পরিবেষণ করতে ভালোবাসেন, আমরা আহার করতে ভালোবাসি। এরকম রুচিভেদে বোধ হয় পরস্পরের কিছু সুবিধা আছে । चांशंद्र यांब्रख् इहेण । শৈল। চন্দ্রবাবু, ওটা মিষ্টি, ওটা আগে খাবেন না, এই দিকে তরকারি অাছে। জলের মাস খুজছেন ? এই-যে মাস। —বলিয়৷ গ্লাস অগ্রসর করিয়া দিল। চন্দ্রবাবুর নির্মলাকে মনে পড়িল। মনে হইল, এই বালকটি যেন নির্মলার ভাই। আত্মসেবায় জনিপুণ চক্রবাবুর প্রতি শৈলের একটু বিশেষ স্নেহোত্ৰক হইল।