পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ 8еф এই ছোটো বইখানি পড়িয়া আমরা বিশেষ আনন্দ ও বল পাইয়াছি। ইহা হইতে দেখিয়াছি, এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে একটি গভীর ও বৃহৎ ঐক্য আছে। চীনের সঙ্গে ভারতবর্ষের প্রাণের মিল দেখিয়া আমাদের প্রাণ ষেন বাড়িয়া যায়। শুধু তাহাই নহে ; এশিয়া ৰে চিরকাল যুরোপের আদালতেই আসামী হইয়। দাড়াইয়া তাহার বিচারকেই বেদবাক্য বলিয়া শিরোধাৰ করিবে, স্বীকার করিবে যে আমাদের সমাজের বারো আনা অংশকেই একেবারে ভিতম্বন্ধ নির্মল করিয়া বিলাতি এঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান -অনুসারে বিলাতি ইটকাঠ দিয়া গড়াই আমাদের পক্ষে একমাত্র শ্রেয়, এই কথাটা ঠিক নহে— আমাদের বিচারালয়ে যুরোপকে দাড় করাইয় তাহারও মারাত্মক অনেকগুলি গলদ আলোচনা করিয়া দেখিবার অাছে, এই বইখানি হইতে সেই ধারণ আমাদের মনে একটু বিশেষ জোর পায়। প্রথমত ভারতবর্ষের সভ্যতা এশিয়ার সভ্যতার মধ্যে ঐক্য পাইয়াছে ইহাতেও আমাদের বল ; দ্বিতীয়ত এশিয়ার সভ্যতার এমন একটি গৌরব অাছে বাহা সত্য বলিয়াই প্রাচীন হইয়াছে, বাহ সত্য বলিয়াই চিরন্তন হইবার অধিকারী, ইহাতেও আমাদের বল । সম্প্রতি আমাদের মধ্যে একটা চঞ্চলতা জন্মিয়াছে ; আমাদের স্বাধীন শক্তি কোনখানে প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে তাহাই সন্ধান করিয়া সেইখানে আশ্রয় লইবার জন্য আমাদের মধ্যে একটা চেষ্টা জাগিয়াছে। বিদেশীর সহিত আমাদের সংঘাত ক্রমশ যতই কঠিন হইয়া উঠিতেছে স্বদেশকে ততই বিশেষভাবে জানিবার ও পাইবার জন্য আমাদের একটা ব্যাকুলত বাড়িয়া উঠিতেছে। দেখিতেছি, ইহা কেবল আমাদের মধ্যে নহে। যুরোপের সংঘাত সমস্ত সভ্য এশিয়াকেই সজাগ করিতেছে। এশিয়া আজি আপনাকে সচেতনভাবে, স্বতরাং সবলভাবে উপলব্ধি করিতে বসিয়াছে। বুঝিয়াছে, আত্মানং বিদ্ধি, আপনাকে জানো— ইহাই মুক্তির উপায়। পরধর্মে ভয়াবহয়, পরের অনুকরণেই বিনাশ । বভপ্রধান শক্তিপ্রধান সভ্যতার সম্পদ আমাদের ইঞ্জিয়মনকে অভিভূত করিয়া দেয়। তাহার কল দ্রুত চলে, তাহার প্রাসাদ আকাশ স্পর্শ করে, তাহার কামান শতঘ্নী, তাহার বাণিজ্যজাল জগদব্যাপী— ইহা আমাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন ও বুদ্ধিকে অভিত না করিয়া থাকিতে পারে না। কিছু না হউক, বিপুলতার একটা গায়ের জোর অাছে, সেই জোরকে ঠেলিয়া উঠিয়া মনকে মোহমুক্ত করা আমাদের মতো দুর্বলের পক্ষে বড়ো কঠিন। যদি বিপুলতাগ্রস্ত এই সভ্যতার দিকেই একমাত্র জামাদের দৃষ্টি নিবন্ধ করি তবে তাহাতে আমাদের মানসিক ছৰ্বলতা কেবল