পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ 8 o© স্বাধীনতা আছে তাহা বিসর্জন দিই ; কেবল ষে আমাদের সমস্ত কাজ কারবার উলটপালট করিয়া দিই তাহা নহে, জামাদের আচারব্যবহার ধর্ম, জামাদের সাৰেক রীতিনীতি, সমস্তই বিপর্যন্ত করিয়া ফেলি। এমত অবস্থায় তোমাদের দশটাি কী হইয়াছে তাহা যদি বেশ করিয়া আলোচনা করিয়া দেখি, তবে আশা করি মাপ করিবে । ‘বাহা দেখা যায় সেটা তো বড়ে উৎসাহজনক নহে। প্রতিযোগিতা-নামক একটা দৈত্যকে তোমরা ছাড়িয়া দিয়াছ, এখন জার সেটাকে কিছুতেই কায়দা করিতে পারিতেছ না। তোমাদের গত একশো বৎসরের বিধিবিধান কেবল এই অধিক বিশৃঙ্খলাকে সংযত করিৰার জন্য অবিশ্রাম নিস্ফল চেষ্টা মাত্র। তোমাদের গরিবেরা, মাতালেরা, অক্ষমেরা, তোমাদের পীড়া ও -জরা গ্রস্তগণ একটা বিভীষিকার মতো তোমাদের ঘাড়ে চাপিয়া আছে। মানুষের সহিত সমস্ত ব্যক্তিগত বন্ধন তোমরা ছেদন করিয়া বসিয়া আছ, এখন স্টেট অর্থাৎ সরকারের অব্যক্তিক উস্তমের দ্বারা তোমরা ব্যক্তির সমস্ত কাজ সারিয়া লইবার বৃথা চেষ্টা করিতেছ। তোমাদের সভ্যতার প্রধান লক্ষণ দায়িত্ববিহীনতা । তোমাদের কারবারের সর্বত্রই তোমরা ব্যক্তির জায়গায় কোম্পানি এবং মজুরের জায়গায় কল বসাইতেছ। মুনফার চেষ্টাতেই সকলে ব্যস্ত— শ্রমজীবীর মঙ্গলের ভার কাহারোই নহে, সেটা সরকারের। সরকার সেটাকে সামলাইয়া উঠিতে পারেন না। সহস্ৰ ক্রোশ দূরে যদি তুর্ভিক্ষ হয়, যদি কোথাও মাণ্ডলের কোনো পরিবর্তন হয়, তবে তোমাদের লক্ষ লোকের কারবার বিশ্লিষ্ট হইবার জো হয়— যাহার উপরে তোমাদের হাত নাই তাহার উপরে তোমাদিগকে নির্ভর করিতে হয়। তোমাদের মূলধন একটা সজীব পদার্থ, সেটা খোরাকের জন্ত সর্বদাই চীৎকার করিতেছে ; তাহাকে আহার না জোগাইলে সে তোমাদের গলা চাপিয়া ধরে । তোমরা যে উৎপন্ন কর সেটা ইচ্ছামত নহে, জগত্যা— এবং তোমরা যে কিনিয়া থাক সেটা যে চাও বলিয়া তাহ নহে, সেটা তোমাদের ঘাড়ের উপর জাসিয়া পড়ে বলিয়া । এই-বে বাণিজ্যটাকে তোমরা মুক্ত ৰল, ইহার মতো বন্ধ বাণিজ্য জার নাই। কিন্তু ইহা কোনো বিবেচনাসংগত ইচ্ছার দ্বারা বন্ধ নহে, ইহা আকস্মিক খেয়ালের স্তৃপাকার মৃঢ়তার দ্বারা বন্দীকৃত। ‘চীনেম্যামের চক্ষে তোমাদের দেশের ভিতরকার জার্থিক অবস্থা এই-রকমই ঠেকে। পররাষ্ট্রের সহিত তোমাদের বাণিজ্যসম্বন্ধ, গেও অত্যন্ত উরালজনক নয়। পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে ধারণা হইয়াছিল যে, বিভিন্ন জাতির মধ্যে যখন বাণিজ্যসম্বন্ধ স্থাপিত হইবে তখন শান্তির সত্যযুগ আলিৰে। কাজে দেখা গেল সমস্তই উলটা।