পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X • রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রাচীনকালের রাজাদের অত্যাকাঙ্ক্ষা ও ধর্মযাজকদের গোড়ামির চেয়ে এই বাণিজ্যস্থান লইয়া পরস্পর টানাটানিতে যুদ্ধবিগ্রহের সম্ভাবনা আরও বেশি প্রবল হইয় উঠিতেছে। পৃথিবীর যেখানেই একটুখানি অপরিচিত স্থান ছিল, সেইখানেই যুরোপের লোক একেবারে ক্ষুধিত হিংস্র জন্তুর মতো হংকার দিয়া পড়িতেছে। এখন যুরোপের এলাকার সীমানার বাহিরে এই লুণ্ঠনব্যাপার চলিতেছে। কিন্তু যতক্ষণ ভাগাভাগি চলিতেছে ততক্ষণ পরস্পরের প্রতি পরস্পর কট্‌মটু করিয়া তাকাইতেছে। আজ হউক বা কাল হউক, যখন আর বঁাটোয়ারা করিবার জন্ত কিছুই বাকি থাকিবে না, তখন তাহারা পরস্পরের ঘাড়ের উপরে গিয়া পড়িবে। তোমাদের শস্ত্রসজ্জার এই আসল তাৎপর্য— হয় তোমরা অন্তকে গ্রাস করিবে, নয় অন্তে তোমাদিগকে গ্রাস করিবে । যে বাণিজ্যসম্পর্ককে তোমরা শাস্তিবন্ধন মনে করিয়াছিলে তাহাই তোমাদিগকে পরস্পরের গলা-কাটাকাটির প্রতিযোগী করিয়া তুলিয়াছে এবং তোমাদের সকলকে একটা বিরাট বিনাশব্যাপারের অনতিদূরে আনিয়া স্থাপন করিয়াছে। লেখক বলেন— পরিশ্রম বঁাচাইবার কল তৈরি করিতে তোমরা যে বুদ্ধি খাটাইতেছ তাহাতে সমাজের কল্যাণ হইতেছে না। তাহাতে ধনবুদ্ধি হইতেছে সন্দেহ নাই, কিন্তু সেটা ষে মজলই আমার মতে এমন কথা মনে করিবার হেতু নাই। ধন কিরূপে ভাগ হয় এবং সেই ধনে জাতির চরিত্রের উপরে কী ফল হয়, তাহাই চিন্তার বিষয় । সেইটে যখন চিন্তা করি তখন বিলাতি পদ্ধতি চীনে ঢুকাইবার প্রস্তাবে মন বিগড়াইয়া যায়। ‘এই তোমরা যতদিন ধরিয়া যন্ত্রতন্ত্রের শ্ৰীবৃদ্ধিসাধনে লাগিয়াছ ততদিনে তোমাদের শ্রমজীবীদিগকে সংকটে ফেলিয় তাহা হইতে উদ্ধারের কোনো একটা ভালো উপায় বাহির কর নাই। ইহা আশ্চর্যের বিষয় নহে ; কারণ টাকা করা তোমাদের প্রধান লক্ষ্য, জীবনের আর-সমস্ত লক্ষ্য তাহার নীচে । চীনেম্যানের কাছে এটা কিছুতেই উৎসাহজনক ঠেকে না । বিলাতি কারবারের প্রণালী যদি চীনদেশে ফালাও করিয়া তোলা যায় তবে তাহার চল্লিশ কোটি অধিবাসীর মধ্যে যে নিশ্চিত বিশৃঙ্খলা জাগিয়া উঠিবে, অন্তত আমি তো তাহাকে অত্যন্ত আশঙ্কার চক্ষে দেখি । তোমরা বলিবে, সে বিশৃঙ্খলা সাময়িক। আমি তো দেখিতেছি, তোমাদের দেশে তাহা চিরস্থায়ী। আচ্ছ, সে কথাও যাক, তাহাতে আমাদের লাভট কী ? আমরা তো তোমাদেরই মতে হইয়া যাইব । সে সম্ভাবনা কি অবিচলিতচিত্তে কল্পনা করা যায় ? তোমাদের লোকেরা নাহয় আমাদের চেয়ে আরামে খায় বেশি, পান করে