পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8}\s রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা ফরাসি মনীষী গিজে দুরোপীয় সত্যতার প্রকৃতি সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন তাহ আমাদের আলোচনার যোগ্য। প্রথমে তাহার মত নিয়ে উদ্ভূত করি। তিনি বলেন, আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার পূর্ববর্তী কালে, কি এশিয়ায় কি অন্যত্র, এমন-কি প্রাচীন গ্রীস-রোমেও, সভ্যতার মধ্যে একটি একমুখী ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। প্রত্যেক সভ্যতা যেন একটি মূল হইতে উঠিয়াছে এবং একটি ভাবকে আশ্রয় করিয়া অধিষ্ঠিত রহিয়াছে ; সমাজের মধ্যে তাহার প্রত্যেক অনুষ্ঠানে, তাহার আচারে বিচারে, তাহার অবয়ববিকাশে, সেই একটি স্থায়ী ভাবেরই কর্তৃত্ব দেখা যায় । যেমন, ইজিপ্টে এক পুরোহিতশাসনতন্ত্রে সমস্ত সমাজকে অধিকার করিয়া বসিয়াছিল ; তাহার আচারব্যবহারে, তাহার কীর্তিস্তম্ভগুলিতে, ইহারই একমাত্র প্রভাব। ভারতবর্ষেও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রে সমস্ত সমাজকে একভাবে গঠিত করিয়া তুলিয়াছিল। সময়ে সময়ে ইহাদের মধ্যে ভিন্ন শক্তির বিরোধ উপস্থিত হয় নাই তাহ বলা যায় না, কিন্তু তাহারা সেই কর্তৃভাবের দ্বারা পরাস্ত হইয়াছে। এইরূপ এক ভাবের কর্তৃত্বে ভিন্ন দেশ ভিন্ন রূপ ফললাভ করিয়াছে। সমগ্র সমাজের মধ্যে এই ভাবের ঐক্যবশত গ্রীস অতি আশ্চর্ষ দ্রুতবেগে এক অপূর্ব উন্নতি লাভ করিয়াছিল। আর কোনো জাতিই এত অল্পকালের মধ্যে এমন উজ্জলতা লাভ করিতে পারে নাই। কিন্তু গ্রীস তাহার উন্নতির চরমে উঠিতে না উঠিতেই যেন জীর্ণ হইয়া পড়িল। তাহার অবনতিও বড়ো আকস্মিক। ষে মূলভাবে গ্রীক সভ্যতায় প্রাণসঞ্চার করিয়াছিল তাহা যেন রিক্ত নিঃশেষিত হইয়া গেল ; আর কোনো নূতন শক্তি আসিয়া তাহাকে বলদান বা তাহার স্থান অধিকার করিল নী । অপর পক্ষে, ভারতবর্ষে ও ইজিপ্টেও সত্যতার মূলভাব এক বটে, কিন্তু সমাজকে তাহা আচল করিয়া রাখিল ; তাহার সরলতায় সমস্ত যেন একঘেয়ে হইয়া গেল। দেশ ধ্বংস হইল না, সমাজ টিকিয়া রহিল, কিন্তু কিছুই অগ্রসর হইল না, সমস্তই এক জায়গায় আসিয়া বদ্ধ হইয়া গেল । প্রাচীন সভ্যতামাত্রেই একটা না একটা কিছুর একাধিপত্য ছিল। সে জার