পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&も রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রধান সমাজকে ক্ষমতাশালী লোকের কাছ হইতে কাজ আদায় করিবার জন্ত সর্বদ বাহবা দিতে হয় ; ষে দান করে তাহার যেমন সমারোহ, যে গ্রহণ করে তাহারও তেমনি অনেক আয়োজনের দরকার হয়। প্রত্যেক সমাজ নিজের বিশেষ প্রকৃতি এবং বিশেষ অবিশুক -অনুসারে নিজের নিয়মে নিজের কাজ-উদ্ধারে প্রবৃত্ত হয় । দাতা দান করিয়াই কৃতার্থ, এই ভাবটার উপরেই আমরা অত্যন্ত ঝোক দিয়া থাকি ; আর গ্রহীতা গ্রহণ করিয়া কৃতাৰ্থ, এই ভাবটার উপরেই যুরোপ অধিক ঝোক দিয়া থাকে। স্বার্থের দিক দিয়া দেখিলে যে গ্রহণ করে তাহারই গরজ বেশি, মঙ্গলের দিক দিয়া দেখিলে যে দান করে তাহারই গরজ বেশি। অতএব আদর্শভেদে ভিন্ন সমাজ ভিন্ন পথ দিয়া নিজের কাজে যাত্রা করে। কিন্তু স্বার্থের উত্তেজনা মানবপ্রকৃতিতে মঙ্গলের উত্তেজনা অপেক্ষ সহজ এবং প্রবল, তাহাতে সন্দেহ নাই। অর্থনীতিশাস্ত্রে বলে ডিমাও-অমুসারে সাপ্লাই, অর্থাৎ চাহিদা-অনুসারে জোগান হইয়া থাকে। খরিদদারের তরফে যেখানে অধিক মূল্য হঁাকে ব্যাবসাদারের তরফ হইতে সেইখানেই অধিক মাল আসিয়া পড়ে। যে সমাজে ক্ষমতার মূল্য বেশি সেই সমাজেই ক্ষমতাশালীর চেষ্টা বেশি হইয়া থাকে, ইহাই সহজ স্বভাবের নিয়ম । কিন্তু আমাদের স্বষ্টিছাড়া ভারতবর্ষ বরাবর সহজ স্বভাবের নিয়মের উপর জয়ী হইবার চেষ্টা করিয়াছে। অর্থনীতিশাস্ত্র আর-সব জায়গাতেই খাটে, কেবল ভারতবর্ষেই তাহা উলট-পালট হইয়া যায়। ছোটো বড়ো সকল বিষয়েই ভারতবর্ষ মানবস্বভাবকে সহজ স্বভাবের উর্ধ্বে রাখিতে চেষ্টা করিয়াছে। ক্ষুধাতৃষ্ণ হইতে আরম্ভ করিয়া ধনমানসম্ভোগ পর্যন্ত কোনো বিষয়েই তাহার চাল চলন সহজ-রকম নহে। আর-কিছু না পায় তো অন্তত তিথিনক্ষত্রের দোহাই দিয়া সে অামাদের অত্যস্ত স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলাকে পদে পদে প্রতিহত করিয়া রাখে। এই দুঃসাধ্য কার্ষে সে অনেক সময় মূঢ়তাকে সহায় করিয়া অবশেষে সেই মূঢ়তার দ্বারা নিজের সর্বনাশ সাধন করিয়াছে। ইহা হইতে তাহার চেষ্টার একান্ত লক্ষ কোন দিকে তাহ বুঝা যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে মানুষের দৃষ্টি সংকীর্ণ। এইজন্ত তাহার প্রবল চেষ্টা এমন-সকল উপায় অবলম্বন করে বাহাতে শেষ কালে সেই উপায়ের স্বারাতেই সে মারা পড়ে। সমস্ত সমাজকে নিষ্কাম মঙ্গলকর্মে দীক্ষিত করিবার প্রবল জাবেগে ভারতবর্ষ অন্ধতাকেও শ্রেয়োজ্ঞান করিয়াছে। এ কথা জুলিয়া গেছে যে, বরঞ্চ স্বার্থের কাজ অন্ধভাবে চলিতে পারে, কিন্তু মঙ্গলের কাজ তাহ পারে না। সজ্ঞান ইচ্ছার