পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छांब्रङदर्द 8२♚. প্রাচীন ভারতবর্ষ স্থখ, স্বার্থ, এমন-কি ঐশ্বৰকে পর্যন্ত খর্ব করিয়া মজলকেই যে ভাবে সমাজের প্রতিষ্ঠাস্থল করিবার চেষ্টা করিয়াছিল এমন আর কোথাও হয় নাই। অন্ত দেশে ধনমানের জন্ত, প্রভুত্ব-অর্জনের জন্ত, হানাহানি-কাড়াকড়ি করিতে সমাজ প্রত্যেককেই উৎসাহ দিয়া থাকে। ভারতবর্ষ সেই উৎসাহকে সর্বপ্রকারে নিরন্ত করিয়াছে; কারণ, স্বার্থোল্পতি তাহার লক্ষ্য ছিল না, মঙ্গলই তাহার লক্ষ্য ছিল। আমরা ইংরাজের ছাত্র আর বলিতেছি, এই প্রতিযোগিতা এই হানাহানির অভাবে আমাদের আজ দুৰ্গতি হইয়াছে। প্রতিযোগিতার উত্তরোত্তর প্রশ্রয়ে ইংলও ফ্রান্স জর্মনি রাশিয়৷ আমেরিকাকে ক্রমশ কিরূপ উগ্র হিংস্রতার দিকে টানিয়া লইয়৷ যাইতেছে, কিরূপ প্রচণ্ড সংঘাতের মুখের কাছে দাড় করাইয়াছে, সভ্যনীতিকে প্রতিদিন কিরূপ বিপর্যন্ত করিয়া দিতেছে, তাহ দেখিলে প্রতিযোগিতাপ্রধান সভ্যতাকেই চরম সভ্যতা বলিতে কোনোমতেই প্রবৃত্তি হয় না। বল বুদ্ধি ও ঐশ্বৰ মনুষ্যত্বের একটা অঙ্গ হইতে পারে, কিন্তু শাস্তি সামঞ্জস্ত এবং মঙ্গলও কি তদপেক্ষা উচ্চতর অঙ্গ নহে? তাহার আদর্শ এখন কোথায় ? এখনকার কোন বণিকের আপিসে, কোন রণক্ষেত্রে ? কোন কালে কোর্তায়, লাল কোর্তায়, বা খাকি কোর্তায় সে সজ্জিত হইয়াছে ? সে ছিল প্রাচীন ভারতবর্ষের কুটিরপ্রাঙ্গণে শুভ্ৰ উত্তরীয় পরিয়া। সে ছিল ব্ৰহ্মপরায়ণ তপস্বীর স্তিমিত ধ্যানাসনে, সে ছিল ধর্মপরায়ণ আর্ধ গৃহস্থের কর্মমুখরিত যজ্ঞশালায়। দল বাধিয়া পূজা, কমিটি করিয়া শোক, বা চার করিয়া কৃতজ্ঞতাপ্রকাশ, এ আমাদের জাতির প্রকৃতিগত নহে এ কথা আমাদিগকে স্বীকার করিতেই হইবে। এ গৌরবের অধিকার আমাদের নাই। কিন্তু তাই বলিয়৷ আমরা লজ্জ পাইতে প্রভত নছি। সংসারের সর্বত্রই হরণ-পূরণের নিয়ম আছে। আমাদের বা দিকে কমতি থাকিলেও ডান দিকে বাড়তি থাকিতে পারে। যে ওড়ে তাহার ডানা বড়ো, কিন্তু পা ছোটে ; ষে দোঁড়ায় তাহার পা বড়ো, কিন্তু ডান নাই। আমাদের দেশে আমরা বলিয়া থাকি, মহাত্মাদের নাম প্রাতঃস্মরণীয়। তাহ কৃতজ্ঞতার ঋণ শুধিবার জন্ত মহে-- ভক্তিভাজনকে দিবসারম্ভে ষে ব্যক্তি ভক্তিভাবে স্মরণ করে তাহার মঙ্গল হয়— মহাপুরুষদের তাহাতে উৎসাহবৃদ্ধি হয় না, ষে ভক্তি করে সে ভালো হয় । ভক্তি করা প্রত্যেকের প্রাত্যহিক কর্তব্য । কিন্তু তবে তো একটা লম্ব নামের মালা গাখিয়া প্রত্যহ জাওড়াইতে হয় এবং সে মালা ক্রমশই বাড়িয় চলে। তাহ হয় না। বখাৰ্থ ভক্তিই ৰেখানে উদ্বেগু সেখানে মালা বেশি বাড়িতে পারে না। ভক্তি বন্ধি নিৰ্জীৰ ন হয় ভৰে সে জীবনের ধর্ম অছলারে গ্রহণ-বর্জন করিতে থাকে, কেবলই লঞ্চয় করিতে থাকে না।