পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ 8©ፃ মধ্যেই নিজেকে কৃতাৰ্থ করা, নিজের মঙ্গলচেষ্টার মধ্যেই নিজেকে পুরস্কৃত করা, এখন আর টেকে না । শুভকর্ম এখন আর সহজ এবং আত্মবিশ্বত নহে, এখন তাহা সর্বদাই উত্তেজনার অপেক্ষ রাখে। যে-সকল ভালো কাজ ধ্বনিত হইয়া উঠে না জামাদের কাছে তাহার মূল্য প্রতিদিন কমিয়া আসিতেছে, এইজন্ত ক্রমশ আমাদের গৃহ পরিত্যক্ত, আমাদের জনপদ নিঃসহায়, অামাদের জন্মগ্রাম রোগজীর্ণ, আমাদের পল্লীর সরোবরসকল পঙ্কদূষিত, আমাদের সমস্ত চেষ্টাই কেবল সভাসমিতি এবং সংবাদপত্র-হাটের মধ্যে। ভ্রাতৃভাব এখন ভ্রাতাকে ছাড়িয়া বাহিরে ফিরিতেছে, দয়া এখন দীনকে ছাড়িয়া সংবাদদাতার স্তম্ভের উপর চড়িয়া দাড়াইতেছে, এবং লোকহিতৈষিত এখন লোককে ছাড়িয়া রাজদ্বারে খেতাব খুজিয়া বেড়াইতেছে। ম্যাজিষ্ট্রেটের তাড়া না থাইলে এখন আমাদের গ্রামে স্কুল হয় না, রোগী ঔষধ পায় না, দেশের জলকষ্ট দূর হয় না। এখন ধ্বনি এবং ধন্যবাদ এবং করতালির নেশা যখন চড়িয়া উঠিয়াছে তখন সেই প্রলোভনের ব্যবস্থা রাখিতে হয়। ঠিক যেন বাছুরটাকে কসাইখানায় বিক্রয় করিয়া ফুক-দেওয়া দুধের ব্যবসায় চালাইতে হইতেছে । অতএব আমরা যে দল বাধিয়া শোক, দল বাধিয়া কৃতজ্ঞতাপ্রকাশের জন্ত পরস্পরকে প্রাণপণে উৎসাহিত করিতেছি, এখন তাহার সময় আসিয়াছে। কিন্তু পরিবর্তনের সন্ধিকালে ঠিক নিয়মমত কিছুই হয় না। সকালে হয়তো শীতের আভাস, বিকালে হয়তো বসন্তের বাতাস দিতে থাকে। দিশি হালকা কাপড় গায়ে দিলে হঠাৎ সর্দি লাগে, বিলাতি মোট কাপড় গায়ে দিলে ঘৰ্মাক্তকলেবর হইতে হয় । সেইজন্ত আজকাল দিশি ও বিলাতি কোনো নিয়মই পুরাপুরি খাটে না। যখন বিলাতি প্রথায় কাজ করিতে যাই, দেশী সংস্কার অলক্ষ্যে হৃদয়ের অস্তঃপুরে থাকিয়া বাধা দিতে থাকে, আমরা লজ্জায় ধিক্কারে অস্থির হইয়া উঠি— দেশী ভাবে যখন কাজ ফাজিয়া বসি তখন বিলাতের রাজ-অতিথি আসিয়া নিজের বসিবার উপযুক্ত আসন না পাইয়া নাসা কুঞ্চিত করিয়া সমস্ত মাটি করিয়া দেয়। সভা-সমিতি নিয়মমত ভাকি, অথচ তাহ সফল হয় না— চাদার খাতা খুলি, অথচ তাহাতে যেটুকু অঙ্কপাত হয় তাহাতে কেবল আমাদের কলঙ্ক ফুটিয়া উঠে। আমাদের সমাজে ষেরূপ বিধান ছিল তাহাতে আমাদের প্রত্যেক গৃহস্থকে প্রতিনি টানা দিতে হইত। তাহার তহবিল আত্মীয়স্বজন অতিৰি-অত্যাগত দীনদ্বাধী সকলের জঙ্গই ছিল। এখনো আমাদের দেশে ষে দরিত্র সে নিজের ছোটাে তাইকে স্কুলে পড়াইতেছে, ভগিনীর বিবাহ দিতেছে পৈতৃক নিত্যনৈমিত্ত্বিক ক্রিয়