পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৪

88을 岭 রবীন্দ্র-রচনাবলী পারিতোষিক, তদুত্তরে নিমন্ত্রণকারী বলে ‘আমি কৃতাৰ্থ হইলাম — ইহাকে অত্যুক্তি বলিতে পারে । l আমাদের দেশে স্ত্রী স্বামীকে পত্রে ‘শ্ৰীচরণেষু পাঠ লিখিয়া থাকে, ইংরেজের কাছে ইহা অত্যুক্তি। ইংরেজ যাহাকে-তাহাকে পত্রে ‘প্রিয় সম্বোধন করে— অভ্যন্ত না হইয়া গেলে ইহা আমাদের কাছে অত্যুক্তি বলিয়া ঠেকিত। নিশ্চয়ই আরও এমন সহস্ৰ দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু এগুলি বাধা অত্যুক্তি, ইহার পৈতৃক। দৈনিক ব্যবহারে আমরা নব নব অত্যুক্তি রচনা করিয়া থাকি, ইহাই প্রাচ্যজাতির প্রতি ভ3সনার কারণ । তালি এক হাতে বাজে না, তেমনি কথা দুজনে মিলিয়া হয়। শ্রোতা ও বক্তা যেখানে পরস্পরের ভাষা বোঝে সেখানে অত্যুক্তি উভয়ের যোগে আপনি সংশোধিত হইয়া আসে। সাহেব যখন চিঠির শেষে আমাকে লেখেন yours truly, সত্যই তোমারই, তখন র্তাহার এই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সত্যপাঠটুকুকে তর্জমা করিয়া আমি এই বুঝি, তিনি সত্যই আমারই নহেন। বিশেষত বড়ো সাহেব যখন নিজেকে আমার বাধ্যতম ভূত্য বলিয়া বর্ণনা করেন তখন অনায়াসে সে কথাটার যোলো আনা বাদ দিয়া তাহার উপরে আরও যোলো আন কাটিয়া লইতে পারি। এগুলি বাধা দপ্তরের অত্যুক্তি, কিন্তু প্রচলিত ভাষাপ্রয়োগের অত্যুক্তি ইংরেজিতে ঝুড়িকুড়ি *so I immensely, immeasurably, extremely, awfully, infinitely, absolutely, ever so much, for the life of me, for the world, unbounded, endless প্রভৃতি শব্দপ্রয়োগগুলি যদি সর্বত্র যথার্থভাবে লওয়া ৰায় তবে প্রাচ্য অত্যুক্তিগুলি ইহজন্মে আর মাথা তুলিতে পারে না। বাহ বিষয়ে আমাদের কতকটা চিলামি আছে এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে। বাহিরের জিনিসকে আমরা ঠিকঠাক-মতো দেখি না, ঠিকঠাক-মতে গ্রহণ করি না । যখন-তখন বাহিরের নয়কে আমরা ছয় এবং ছয়কে আমরা নয় করিয়া থাকি । ইচ্ছা করিয়া না করিলেও এ স্থলে অজ্ঞানকৃত পাপের ভবল দোষ— একে পাপ তাহাতে অজ্ঞান। ইন্দ্রিয়কে এমন অলস এবং বুদ্ধিকে এমন অসাবধান করিয়া রাখিলে পৃথিবীতে আমাদের দুটি প্রধান নির্ভরকে একেবারে মাটি করা হয় । বৃত্তাস্তকে নিতান্ত ফাকি দিয়া সিদ্ধান্তকে যাহার কল্পনার সাহায্যে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করে তাহারা নিজেকেই ফাকি দেয়। যে-যে বিষয়ে আমাদের ফাকি আছে সেই-সেই বিষয়েই আমরা ঠকিয়া বসিয়া আছি। একচক্ষু হরিণ ৰে দিকে তাহার কানা চোখ ফিরাইয়। আরামে ঘাস খাইতেছিল সেই দিক হইতেই ব্যাধের তীর তাহার