পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8é९ রবীন্দ্র-রচনাবলী কৃষকের খাজনা বাড়িতে বাড়িতে সেই হতভাগ্য ঋণসমূত্রের মধ্যে চিরদিনের মতে নিময় হইয়াছে— এই তো গেল বাণিজ্য এবং কৃষি। তাহার পর বীর্ষ এবং অন্ত্র, সে কথার উল্লেখ করিবার প্রয়োজন নাই। ইংরেজ বলে, “তোমরা কেবলই চাকরির দিকে ঝুকিয়াছ, ব্যাবসা কর না কেন ? এ দিকে দেশ হইতে বর্ষে বর্ষে প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকা খাজনায় ও মহাজনের লাভে বিদেশে চলিয়া যাইতেছে। মূলধন থাকে কোথায় ? এই অবস্থায় দাড়াইয়াছি। তৰু কি বিলাতি অত্যুক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া কেবলই দরখাস্ত জারি করিতে হইবে ? হায়, ভিক্ষুকের অনন্ত ধৈর্য ! হায়, দরিদ্রাণাং মনোরথা: ! রোমের শাসনে, স্পেনের শাসনে, মোগলের শাসনে এতবড়ো একটা বৃহৎ দেশ কি এমন নিঃশেষে উপায়বিহীন হইয়াছে। অথচ পরদেশশাসন সম্বন্ধে এত বড়ো বড়ো নীতিকথার দন্তপূর্ণ অত্যুক্তি আর কেহ কি কখনো উচ্চারণ করিয়াছে ? কিন্তু এ-সকল অপ্রিয় কথা উত্থাপন করা কেন । কোনো একটা জাতিকে অনাবশ্যক আক্রমণ করিয়া পীড়া দেওয়া আমাদের দেশের লোকের স্বভাবসংগত নহে, ইহা আমরা ক্রমাগত ঘা খাইয়া ইংরেজের কাছ হইতেই শিখিয়াছি। নিতান্ত গায়ের জালায় আমাদিগকে যে অশিষ্টতায় দীক্ষিত করিয়াছে তাহা আমাদের দেশের জিনিস নহে । কিন্তু অন্তের কাছ হইতে আমরা যতই আঘাত পাই-না কেন, আমাদের দেশের যে চিরন্তন নম্রতা, যে ভদ্রতা, তাহা পরিত্যাগ করিব কেন ? ইহাকেই বলে চোরের উপর রাগ করিয়া নিজের ক্ষতি করা। অবশু, পরের নিকট হইতে স্বজাতি যখন অপবাদ ও অপমান সহ করিতে থাকে তখন যে আমার মন অবিচলিত থাকে এ কথা আমি বলিতে পারি না। কিন্তু সেই অপবাদলাঞ্ছনার জবাব দিবার জন্তই যে আমার এই প্রবন্ধ লেখা তাহা নহে। আমরা যেটুকু জবাব দিবার চেষ্টা করি তাহ নিতান্ত ক্ষীণ, কারণ বাশক্তিই আমাদের একটিমাত্র শক্তি। কামানের যে গর্জন তাহা ভীষণ, কারণ তাহার সঙ্গে সঙ্গে লোহার গোলাটা থাকে। কিন্তু প্রতিধ্বনির ষে প্রত্যুত্তর তাহ ফাকা— সেরূপ খেলামাত্রে আমার অভিরুচি নাই । ইংরেজ আমার এ লেখা পড়িবে না, পড়িলেও সকল কথা ঠিক বুঝিবে না। আমার এ লেখা আমাদের স্বদেশীয় পাঠকদের জন্যই। অনেক দিন ধরিয়া চোখ বুজিয়া আমরা বিলাতি সভ্যতার হাতে আত্মসমর্পণ করিয়াছিলাম। ভাবিয়াছিলাম, সে সত্যত স্বার্থকে অভিভূত করিয়া বিশ্বহিতৈষী ও বিশ্বজনের শৃঙ্খলমুক্তির পথেই সত্য প্রেম শাভির মহকুলে অগ্রসর হইতেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ চমক ভাঙিবার সময় জাসিয়াছে।