পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ 89} মহুসংহিতা প্রভৃতি গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা পণ্ডিত সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ মহাশয় এই বাংলা অনুবাদগ্রন্থের ভূমিকায় দেখাইয়াছেন। এ স্থলে কে কাহার নিকট হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছে তাহ লইয়া তর্ক করা নিরর্থক। এই-সকল ভাবের ধারা ভারতবর্ষে অনেক দিন হইতে প্রবাহিত হইয়া আসিতেছে। আমাদের দেশ এমনি করিয়াই চিন্তা করিয়া আসিয়াছে। ৰুদ্ধ এইগুলিকে চতুর্দিক হইতে সহজে আকর্ষণ করিয়া, আপনার করিয়া, সুসম্বন্ধ করিয়া, ইহাদিগকে চিরন্তনরূপে স্থায়িত্ব দিয়া গেছেন— যাহা বিক্ষিপ্ত ছিল তাহাকে ঐক্যস্থত্রে গাথিয়া মানবের ব্যবহারযোগ্য করিয়া গেছেন। অতএব ভগবদগীতায় ভারতবর্ষ যেমন আপনাকে প্রকাশ করিয়াছে, গীতার উপদেষ্ট ভারতের চিস্তাকে যেমন এক স্থানে একটি সংহত মূর্তি দান করিয়াছেন, ধৰ্ম্মপদং গ্রন্থেও ভারতবর্ষের চিত্তের একটি পরিচয় তেমনি ব্যক্ত হইয়াছে। এইজন্তই কী ধৰ্ম্মপদে, কী গীতায়, এমন অনেক কথাই আছে ভারতের অস্তান্ত নানা গ্রন্থে যাহার প্রতিরূপ দেখিতে পাওয়া যায়। ধর্মগ্রন্থকে যাহারা ধর্মগ্রন্থরূপে ব্যবহার করিবেন তাহারা যে ফললাভ করিবেন এখানে তাহার আলোচনা করিতেছি না। এখানে আমরা ইতিহাসের দিক হইতে বিষয়টাকে দেখিতেছি— সেইজন্ত ধৰ্ম্মপদং গ্রন্থটিকে বিশ্বজনীনভাবে না লইয়া আমরা তাহার সহিত ভারতবর্ষের সংস্রবের কথাটাই বিশেষ করিয়া পাড়িয়াছি। সকল মাছুষের জীবনচরিত যেমন, তেমনি সকল দেশের ইতিহাস এক ভাবের হইতেই পারে না, এ কথা আমরা পূর্বে অন্যত্র কোথাও বলিয়াছি। এইজন্ত, যখন আমরা বলি যে ভারতবর্ষে ইতিহাসের উপকরণ মেলে না তখন এই কথা বুঝিতে হইবে যে, ভারতবর্ষে যুরোপীয় ছাদের ইতিহাসের উপকরণ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, ভারতবর্ষের ইতিহাস রাষ্ট্রীয় ইতিহাস নহে। ভারতবর্ষে এক বা একাধিক নেশন কোনোদিন সকলে মিলিয়া রাষ্ট্রের চাক বাধিয়া তুলিতে পারে নাই। স্থতরাং এ দেশে কে কবে রাজা হইল, কতদিন রাজত্ব করিল, তাহা লিপিবদ্ধভাবে রক্ষা করিতে দেশের মনে কোনো আগ্রহ জন্মে নাই । ভারতবর্ষের মন যদি রাষ্ট্রগঠনে লিপ্ত থাকিত তাহা হইলে ইতিহাসের বেশ মোটা মোট উপকরণ পাওয়া যাইত এবং ঐতিহাসিকের কাজ অনেকটা সহজ হইত। কিন্তু তাই বলিয়া ভারতবর্ষের মন যে নিজের অতীত ও ভবিষ্যৎকে কোনো ঐক্যস্থত্রে গ্রথিত করে নাই তাহ স্বীকার করিতে পারি না। সে স্বত্র স্বল্প, কিন্তু তাহার প্রভাব বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত হইতে দেয় নাই। সর্বত্র যে বৈচিত্র্যহীন গাম্য স্থাপন করিয়াছে তাহা