পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ 8ግ› আশা করি, আজ তাহ আমাদের কাছে বৰগত সত্যরূপে উজ্জল হইয়া উঠিয়াছে। কারণ, যাহাকে আমরা সত্যরূপে না লাভ করি তাহার সহিত আমরা যথার্থ ব্যবহার স্থাপন করিতে পারি না, তাহার জন্ত ত্যাগ করিতে পারি না, তাহার জন্ত দুঃখ স্বীকার করা আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়। তাহার সম্বন্ধে যতই কথা শুনি, যতই কথা কই, সমস্তই কেবল কুহেলিক স্বটি করিতে থাকে। এই-বে বাংলাদেশ ইহার স্মৃত্তিক, ইহার জল, ইহার বায়ু, ইহার আকাশ, ইহার বন, ইহার শস্তক্ষেত্র লইয়া আমাদিগকে সর্বতেভাবে বেষ্টন করিয়া আছে— যাহা আমাদের পিতা-পিতামহগণকে বহুযুগ হইতে লালন করিয়া আসিয়াছে, যাহা আমাদের অনাগত সস্তানদিগকে বক্ষে ধারণ করিবার জন্ত প্রস্তুত হইয়া আছে, যে কল্যাণী আমাদের পিতৃগণের অমর কীর্তি অমৃতবাণী আমাদের জন্য বহন করিয়া চলিয়াছে, আমরা তাহাকে যেন সত্য পদার্থের মতোই সর্বতোভাবে ভালোবাসিতে পারি— কেবলমাত্র ভাবরসসভোগের মধ্যে আমাদের সমস্ত প্রীতিকে নিঃশেষ করিয়া না দিই। আমরা যেন ভালোবাসিয়া তাহার মৃত্তিকাকে উর্বর ফলপুপবতী করিয়া তুলি, তাহার নরনারীকে মচুন্যত্বলাভে সাহায্য করি। যাহাকে এমনি সত্যরূপে জানি ও সত্যরূপে ভালোবাসি, তাহাকেই আমরা সকল দিক দিয়া এমনি করিয়া সাজাই, সকল দিক হইতে এমনি করিয়া সেবা করি, এবং সেই আমাদের সেবার সামগ্ৰী প্রাণের ধনের জন্ত প্রাণ দিতে কুষ্ঠিত হই না। আমি যে এক আমি নহি, আমার যেমন এই ক্ষুত্র শরীর তেমনি আমার যে একটি বৃহৎ শরীর আছে, আমার দেশের মাটি জল আকাশ ষে আমারই দেহের বিস্তার, তাহারই স্বাস্থ্যে ষে আমারই স্বাস্থ্য, আমার সমস্ত স্বদেশীদের স্থখদুঃখময় চিত্ত যে আমারই চিত্তের বিস্তার, তাহারই উন্নতি যে আমারই চিত্তের উন্নতি, এই একান্ত সত্য যতদিন আমরা না উপলব্ধি করিয়াছি ততদিন আমরা দুর্ভিক্ষ হইতে দুর্ভিক্ষে, দুৰ্গতি হইতে দুৰ্গতিতে অবতীর্ণ হইয়াছি— ততদিন কেবলই আমরা ভয়ে ভীত এবং অপমানে লাতি হইয়াছি। একবার ভাবিয়া দেখুন, আজ যে বহুদিনের দাসত্ত্বে পিষ্ট অন্নাভাবে ক্লিষ্ট কেরানি সহসা অপমানে অসহিষ্ণু হইয়া ভবিষ্যতের বিচার বিসর্জন দিয়াছে তাহার কারণ কী। তাহার কারণ, তাহারা অনেকটা পরিমাণে আপনাকে সমস্ত বাঙালির সহিত এক বলিয়া অনুভব করিয়াছে। যতদিন তাহারা নিজেকে একেবারে স্বতন্ত্র বিচ্ছিন্ন বলিয়া জানিত ততদিন তাহারা ভুল জানিত। ইহাই মায়া। এই মায়াই তাহাদিগকে ক্লিষ্ট করিয়াছে, অপমানিত করিয়াছে। মাহুৰ ষে মৃত্যুকে ভয় করে সেও এই ভ্রমবশতই করে। সে মনে করে, আমি বুঝি স্বতন্ত্র, স্বতরাং মৃত্যুতেই