পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>९ রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন সময় তাহার মাতা রোদন করিতে করিতে চণ্ডীমণ্ডপে আসিয়া একটি বালিকার বৈধব্যসংঘটনের উল্লেখ করিয়া তাহাকে বলিলেন, ‘তুই এতদিন এত শাস্ত্ৰ পড়িলি, তাহাতে বিধবার কি কোনো উপায় নাই ? মাতার পুত্র উপায়-অন্বেষণে প্রবৃত্ত হইলেন। স্ত্রীজাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের বিশেষ স্নেহ অথচ ভক্তি ছিল। ইহাও তাহার স্থমহং পৌরুষের একটি প্রধান লক্ষণ। সাধারণত আমরা স্ত্রীজাতির প্রতি ঈর্ষাবিশিষ্ট ; অবলা স্ত্রীলোকের মুখস্বাস্থ্যস্বচ্ছন্দতা আমাদের নিকট পরম পরিহাসের বিষয়, প্রহসনের উপকরণ। আমাদের ক্ষুদ্রতা ও কাপুরুষতার অন্তান্ত লক্ষণের মধ্যে ইহাও একটি । বিদ্যাসাগর শৈশবে জগদ্ধলভবাবুর বাসায় আশ্রয় পাইয়াছিলেন। জগদ্ধলভের কনিষ্ঠ ভগিনী রাইমণির সম্বন্ধে তিনি স্বরচিত জীবনবৃত্তাস্তে যাহা লিথিয়াছেন তাহা এ স্থলে উদ্যুত করা যাইতে পারে – 'রাইমণির অদ্ভূত স্নেহ ও ষত্ব আমি কস্মিনকালেও বিশ্বত হইতে পারিব না। র্তাহার একমাত্র পুত্ৰ গোপালচন্দ্র ঘোষ আমার প্রায় সমবয়স্ক ছিলেন । পুত্রের উপর জননীর যেরূপ স্নেহ ও ষত্ব থাকা উচিত ও আবগুক, গোপালচন্দ্রের উপর রাইমণির স্নেহ ও ষত্ব তদপেক্ষা অধিকতর ছিল, তাহার সংশয় নাই। কিন্তু আমার আস্তরিক দৃঢ়বিশ্বাস এই যে, স্নেহ ও ষত্ব বিষয়ে, আমায় ও গোপালে রাইমণির অণুমাত্র বিভিন্নভাব ছিল না । ফলকথা এই, স্নেহ, দয়া, সৌজন্য, অমায়িকতা, সদবিবেচনা প্রভৃতি সদগুণ বিষয়ে, রাইমণির সমকক্ষ স্ত্রীলোক এপর্যন্ত আমার নয়নগোচর হয় নাই। এই দয়াময়ীর সৌম্যমূর্তি, আমার হৃদয়মন্দিরে, দেবীমূর্তির স্তায়, প্রতিষ্ঠিত হইয়া বিরাজমান রহিয়াছে। প্রসঙ্গক্রমে, তাহার কথা উত্থাপিত হইলে, তীয় অপ্রতিম গুণের কীর্তন করিতে করিতে, অশ্রপাত না করিয়া থাকিতে পারি না। আমি স্ত্রীজাতির পক্ষপাতী বলিয়া, অনেকে নির্দেশ করিয়া থাকেন। আমার বোধ হয়, সে নির্দেশ অসঙ্গত নহে। যে ব্যক্তি রাইমণির স্নেহ, দয়া, সৌজন্য প্রভৃতি প্রত্যক্ষ করিয়াছে, এবং ঐ সমস্ত সদগুণের ফলভোগী হইয়াছে, সে যদি স্ত্রীজাতির পক্ষপাতী না হয়, তাহা হইলে, তাহার তুল্য কৃতঘ্ন পামর ভূমণ্ডলে নাই।’ স্ত্রীজাতির স্নেহদয়াসৌজন্য হইতে বঞ্চিত হইয়াছে, আমাদের মধ্যে এমন হতভাগ্য কয়জন আছে ? কিন্তু ক্ষুদ্র হৃদয়ের স্বভাব এই ৰে, সে ৰে পরিমাণে অবাচিত উপকার বােন কল্প লিন এই গিগামীকান্ত