পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা 《24: জালোককে রুদ্ধ করিয়া দাড়াইতে পারে। ধনসম্পদের মধ্যেই দীনহৃদয় আপনার সার্থকতা উপলব্ধি করিতে থাকে ; সে বলে, এই তো আমি কৃতাৰ্থ হইয়াছি, দশে আমার স্তব করিতেছে, দেশে আমার প্রতাপ বিকীর্ণ হইতেছে, বাহিরে আমার আড়ম্বর অভ্ৰভেদ করিতেছে, ঘরে আমার আরামশয়ন প্রতিদিন স্তরে স্তরে রাণীকৃত হইয়া উঠিতেছে — আমার আর কী চাই ! হায় রে দরিত্র, নিখিল মানবের অন্তরাত্মা যখন ক্ৰন্দন করিয়া উঠিয়াছে ‘যাহাতে আমি অমর না হইব তাহা লইয়া আমি কী করিব, যেনাহং নামৃত স্তাং কিমহং তেন কুর্ষামূ- সপ্তলোক যখন অন্তরীক্ষে উর্ধ্বকররাজি প্রসারিত করিয়া প্রার্থনা করিতেছে ‘আমাকে সত্য দাও, আলোক দাও, অমৃত দাও, আসতে মা সদগময়, তমসে মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মামৃতং গময়’– তখন তুমি বলিতেছ, ‘আমার ধন আছে, আমার মান আছে, আমার আরাম আছে, আমি প্রভু, আমি অধিপতি, আমার আর কী চাই। ঐশ্বর্ষের ইহাই বিড়ম্বনা— দীনাত্মার কাছে ঐশ্বৰ্ষই চরম সার্থকতার রূপ ধারণ করে। অদ্যকার উৎসবে আমরা যাহার মাহাত্ম্য স্মরণ করিবার জন্য সমবেত হইয়াছি, একদা প্রথম-যৌবনেই তাহার অধ্যাত্মদৃষ্টি এই কঠিন ঐশ্বর্ষের দুলঙ্ঘ প্রাচীর অতিক্রম করিয়া অস্তরের দিকে উন্নীলিত হইয়াছিল— যখন তিনি ধনমানের দ্বারা নীরন্ধভাবে আবৃত-আচ্ছন্ন ছিলেন তখনই ধনসম্পদের স্কুলতম আবরণ ভেদ করিয়া, স্তাবকগণের বন্দনাগানকে অধ:কৃত করিয়া, আরামআমোদ-আড়ম্বরের ঘন যবনিকা বিচ্ছিন্ন করিয়া, এই অমৃতবাণী তাহার কর্ণে কেমন করিয়া প্রবেশলাভ করিল যে ঈশাবাস্তমিদং সৰ্বং — বাহ-কিছু সমস্তকেই ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছন্ন দেখিবে, ধনের দ্বারা নহে, স্বার্থের দ্বারা নহে, আত্মাভিমানের দ্বারা নহে– যিনি ঈশানং ভূতভব্যস্ত', যিনি আমাদের অনস্তকালের ঈশ্বর, অামাদের ভূতভবিষ্যতের প্রভু, তাহাকে এই ধনিসস্তান কেমন করিয়া মুহূর্তের মধ্যে ঐশ্বৰ্ষপ্রভাবের উর্ধ্বে, সমস্ত প্রভুত্বের উচ্চে আপনার একমাত্র প্রভু বলিয়া প্রত্যক্ষ করিতে পারিলেন– সংসারের মধ্যে র্তাহার নিজের প্রভুত্ব, সমাজের মধ্যে র্তাহার ধনমর্যাদার সম্মান তাহাকে অন্ধ করিয়া রাখিতে পারিল না। আবার যেদিন এই প্রভূত ঐশ্বৰ্ষ অকস্মাৎ এক ছুদিনের বজাঘাতে বিপুল আয়োজন-আড়ম্বর লইয়া তাহার চতুর্দিকে সশকে তাডিয়া পড়িতে লাগিল— ঋণ ৰখন মুহূর্তের মধ্যেই বৃহদাকার ধারণ করিয়া তাহার গৃহদ্বার, তাহার স্থখসমৃদ্ধি, তাহার অশনবসন, সমস্তই গ্রাস করিবার উপক্ৰম করিল— তখনো পদ্ম যেমন আপন মৃণালবৃন্ত দীর্ঘতর করিয়া জলপ্লাবনের উর্ধ্বে আপনাকে স্বর্বকিরণের দিকে নির্মল সৌন্দর্ধে