পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ミbr রবীন্দ্র-রচনাবলী সত্যে বিশ্বাসে দৃঢ় থাকিতে দেখিলাম ; দেখিলাম উপস্থিত গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা তাহাকে টলাইতে পারিল না। হিন্দুসমাজের মধ্যে তিনি পরম দুর্দিনেও একাকী দাড়াইয়াছিলেন, ব্রাহ্মসমাজে তিনি নব আশা নব উৎসাহের অভু্যদয়ের মুখে পুনর্বার সমস্ত ত্যাগ করিয়া একাকী দাড়াইলেন । র্তাহার কেবল এই প্রার্থনা রহিল : মাহং ব্ৰহ্ম নিরাকুর্ষাং মা মা ব্ৰহ্ম নিরাকরোং — আমি ব্রহ্মকে ত্যাগ করিলাম না, ব্ৰহ্ম আমাকে ত্যাগ না করুন । ধনসম্পদের স্বর্ণস্তৃপরচিত ঘনান্ধকার ভেদ করিয়া নবযৌবনের অপরিতৃপ্ত প্রবৃত্তির পরিবেষ্টনের মধ্যে দিব্যজ্যোতি যাহ্বার ললাট স্পর্শ করিয়াছিল, ঘনীভূত বিপদের ভ্ৰকুটকুটিল রুদ্রচ্ছায়ায় আসন্ন দারিদ্র্যের উদ্যত বজদণ্ডের সম্মুখেও ঈশ্বরের প্রসন্ন মুখচ্ছবি যাহার অনিমেষ অন্তর্দৃষ্টির সম্মুখে অচঞ্চল ছিল, দুর্দিনের সময়েও সমস্ত লোকভয় অতিক্রম করিয়া যাহার কর্ণে ধর্মের ‘মা ভৈঃ’ বাণী সুস্পষ্ট ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছিল, বলবৃদ্ধি-দলপুষ্টির মুখে যিনি বিশ্বাসের বলে সমস্ত সহায় হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া নিঃসংকোচে পরমসহায়ের আশ্রয়গ্রহণ করিয়াছিলেন, অদ্য র্তাহার পুণ্যচেষ্টাভূয়িষ্ঠ সুদীর্ঘ জীবনদিনের সায়াহ্নকাল সমাগত হইয়াছে। অন্ত র্তাহার ক্লাস্তকণ্ঠের স্বর ক্ষীণ, কিন্তু তাহার সম্পূর্ণপ্রায় জীবনের নিঃশব্দবাণী মুস্পষ্টতর। অন্ত তাহার ইহজীবনের কর্ম সমাপ্ত, কিন্তু তাহার জীবনব্যাপী কর্মচেষ্টার মূলদেশ হইতে যে একাগ্র নিষ্ঠ উর্ধ্বলোকে উঠিয়াছে তাহা আজ নিস্তব্ধভাবে প্রকাশমান । অদ্য তিনি র্তাহার এই বৃহৎ সংসারের বহিরদ্ধারে আসিয়া দাড়াইয়াছেন, কিন্তু সংসারের সমস্ত স্বথদুঃখ-বিচ্ছেদমিলনের মধ্যে যে অচলা শাস্তি জননীর আশীর্বাদের স্থায় চিরদিন তাহার অস্তরে ধ্রুব হইয়া ছিল তাহ দিনাস্তকালের রমণীয় স্বর্যাস্তচ্ছটার স্থায় অদ্য র্তাহাকে বেষ্টন করিয়া উদভাসিত। কর্মশালায় তিনি তাহার জীবনেশ্বরের আদেশ পালন করিয়া অদ্য বিরামশালায় তিনি র্তাহার হৃদয়েশ্বরের সহিত নির্বাধমিলনের পথে যাত্রা করিবার জন্য প্রস্তুত হইয়াছেন । এই পুণ্যক্ষণে আমরা তাহাকে প্রণাম করিবার জন্ত, তাহার সার্থকজীবনের শাস্তিসৌন্দর্যমণ্ডিত শেষ রশ্মিচ্ছটা মস্তক পাতিয়া গ্রহণ করিবার জন্ত, এখানে সমাগত হইয়াছি। বন্ধুগণ, যাহার জীবন আপনাদের জীবনশিখাকে ক্ষণে ক্ষণে উজ্জল করিয়াছে, যাহার বাণী অবসাদের সময় আপনাদিগকে বল ও বিষাদের সময় আপনাদিগকে সাস্বনা দিয়াছে, তাহার জন্মদিনকে উৎসবের দিন করিয়া আপনার ভক্তিকে চরিতার্থ করিতে আসিয়াছেন, এইখানে আমি আমার পুত্রসম্বন্ধ লইয়া এই উৎসবদিনে যদি ক্ষণকালের জন্ত পিতার নিকট বিশেষভাৰে উপস্থিত হই, তবে আমাকে মার্জনা