পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা ¢©ዓ স্ববিধাকর হইতে পারে না । ভক্তির মোহে অন্ধ হইয়া, দলের গর্বে মত্ত হইয়া, এ কথা ভুলিলে চলিবে না। কথামালার গল্প সকলেই জানেন— শৃগাল থালায় ঝোল রাথিয়া সারসকে নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিল, লম্বা ঠোট লইয়া সারস তাহ খাইতে পারে নাই। তার পর সারস যখন সক্ষমুখ চোঙের মধ্যে ঝোল রাখিয়া শৃগালকে ফিরিয়া নিমন্ত্ৰণ করিল, তখন শৃগালকে ক্ষুধা লইয়াই ফিরিতে হইয়াছিল। সেইরূপ, এমন সর্বজনীন ধর্মসমাজ আমরা কল্পনা করিতে পারি না যাহা তাহার মত ও অনুষ্ঠান লইয়া সকলেরই বুদ্ধি রুচি ও প্রয়োজনকে পরিতৃপ্ত করিতে পারে। অতএব শাস্ত্রীয় ধর্মমত ও জাহুষ্ঠানিক ধর্মসমাজ স্থাপনের দিক হইতে পৃথিবীর ধর্মগুরুদিগকে দেখা তাহাদিগকে ছোটো করিয়া দেখা । তেমন করিয়া কেবল দলের লোকেরাই দেখিতে পারে এবং তাহাতে করিয়া কেবল দলাদলিকেই বাড়াইয়া তোলা হয়। র্তাহাদের মধ্যে নিশ্চয়ই এমন একটি দেখিবার আছে যাহা লইয়া সকল দেশে সকল কালে সকল মানুষকেই আহবান করা যায় । যাহা প্রদীপমাত্র নহে, যাহা আলো । সেটি কী ? না, যেটি র্তাহারা নিজেরা পাইয়াছেন । যাহা গড়িয়াছেন তাহা নহে। স্বাহ পাইয়াছেন সে তে র্তাহীদের নিজের স্বষ্টি নহে, যাহা গড়িয়াছেন তাহা র্তাহীদের নিজের রচনা । আজ যাহার স্মরণার্থ আমরা সকলে এখানে সমবেত হইয়াছি তাহাকেও যাহাতে কোনো-একটা দলের দিক হইতে না দেখি, ইহাই আমার নিবেদন । সম্প্রদায়ভুক্ত লোকের সম্প্রদায়ের ধ্বজাকেই সর্বোচ্চ করিয়া ধরিতে গিয়া পাছে গুরুকেও তাহার কাছে খর্ব করিয়া দেন, এ আশঙ্কা মন হইতে কিছুতেই দূর হয় না— অন্তত আজিকার দিনে নিজেদের সেই সংকীর্ণতা তাহার প্রতি যেন আরোপ না করি। অবগুই, কর্মক্ষেত্রে তাহার প্রকৃতির বিশেষত্ব নানারূপে দেখা দিয়াছে। তাহার ভাষায়, তাহার ব্যবহারে, তাহার কর্মে, তিনি বিশেষভাবে নিজেকে আমাদের কাছে প্রকাশ করিয়াছেন— তাহার সেই স্বাভাবিক বিশেষত্ব জীবনচরিত-আলোচনা-কালে উপাদেয় সন্দেহ নাই। সেই আলোচনায় তাহার সংস্কার, তাহার শিক্ষা, তাহার প্রতি তাহার দেশের ও কালের প্রভাব-সম্বন্ধীয় সমস্ত তথ্য, আমাদের কৌতুহলনিবৃত্তি করে। কিন্তু সেই-সমস্ত বিশেষ ভাবকে আচ্ছন্ন করিয়া দিয়া তাহার জীবন কি আর কাহাকেও আমাদের কাছে প্রকাশ করিতেছে না ? অালো কি প্রত্নীপকে প্রকাশ করিবার জন্ত, না প্রদীপ আলোকে প্রচার করিবার জন্ত ? তিনি যাহাকে দেখিতেছেন ও দেখাইতেছেন যদি আজ সেই দিকেই আমাদের সমস্ত দৃষ্টি না যায়, আজ যদি তাহার নিজের বিশেষজের