পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

έξ• রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়াছেন– এই অতি নির্মল নির্জননিভৃত স্বাতন্ত্র্যের মধ্যেই তাহার সঙ্গে আমাদের মিলনের স্থান নির্দিষ্ট রহিয়াছে। সেইখানকার দ্বার যখন আমরা নিজের চেষ্টায় খুলিয়া তাহার কাছে আমাদের সেই চরম স্বাতন্ত্র্যের অধিকার একেবারে ছাড়িয়া দিব, বিশ্বের মধ্যে যাহা আমি ছাড়া আর কাহারও নহে সেইটেই যখন তাহার কাছে সমর্পণ করিতে পারিব, তখনই আর আমার কিছু বাকি থাকিবে না, তখনই তাহাকে পাওয়া যাইবে । এই-ষে আমাদের স্বাতন্ত্র্যের দ্বার, ইহার প্রত্যেকের চাবি স্বতন্ত্র । একজনের চাবি দিয়া আর-একজনের দ্বার খুলিবে না। পৃথিবীতে যাহারা ঈশ্বরকে না পাওয়া পর্যস্ত থামেন নাই, তাহারা সকলেই ব্যাকুলতার নির্দেশ মানিয়া, নিজের চাবি নিজে যেমন করিয়া পারেন সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছেন । কেবল পরের প্রতি নির্ভর করিয়া আলস্তবশত এ র্যাহারা না করিয়াছেন তাহারা কোনো-একটা ধর্মমত ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মসম্প্রদায়ে আসিয়া ঠেকিয়াছেন ও সেইখানেই তরঙ্গিত হইয়া উঠিয়া কলরব করিতেছেন, শেষ পর্যন্ত গিয়া পৌছেন নাই। আমাদের শক্তি যদি ক্ষীণ হয়, আমাদের আকাজক্ষা যদি সত্য না হয়, তবে আমরা শেষ পর্যন্ত কবে গিয়া পৌছিব জানি না। কিন্তু মহাপুরুষদের জীবন যেদিন আলোচনা করিতে বসিব সেদিন যেন সেই লক্ষ্যের কথাটাই সম্মুখে রাখি, তাহাদের স্মৃতি যেন আমাদিগকে পারের ঘাটের আলো দেখায়, তাহাকে যেন আমরা কোনোদিন সাম্প্রদায়িক অভিযানের মশাল করিয়া না তুলি। তাহদের দৃষ্টান্ত আমাদিগকে বন্ধন হইতে উদ্ধার করিয়া দিবে, পরবশত হইতে উত্তীর্ণ করিয়া দিবে, আমাদিগকে নিজের সত্যশক্তিতে সত্যচেষ্টায় সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিবে, অামাদিগকে ভিক্ষা দিবে না, সন্ধান দিবে— আশ্রয় দিবে না, অভয় দিবে— অনুসরণ করিতে বলিবে ন, অগ্রসর হইতে উৎসাহিত করিবে। এক কথায়, মহাপুরুষ তাহার নিজের রচনার দিকে আমাদিগকে টানিতেছেন না, ঈশ্বরের দিকে আহবান করিতেছেন। আজ আমরা যেন মনকে স্তব্ধ করি, শাস্ত করি ; যাহা প্রতিদিন ভাঙিতেছে গড়িতেছে, যাহা লইয়া তর্কবিতর্ক-বিরোধবিদ্বেষের অস্ত নাই, যেখানে মানুষের বুদ্ধির রুচির অভ্যাসের অনৈক্য, সে-সমস্তকেই মৃত্যুর সম্মুখে যেন আজ ক্ষুদ্র করিয়া দেখিতে পারি ; কেবল আমাদের আত্মার যে শক্তিকে ঈশ্বর আমাদের জীবনমৃত্যুর নিত্যসম্বলন্ধপে আমাদিগকে দান করিয়াছেন, তাহার যে বাণী আমাদের স্বখে-দুঃখে উখানে-পতনে জয়ে-পরাজয়ে চিরদিন আমাদের অন্তরাত্মায় ধ্বনিত হইতেছে,র্তাহার যে সম্বন্ধ নিগুঢ়রূপে নিত্যরূপে একান্তরূপে আমারই, তাহাই আজ নির্মলচিত্তে উপলব্ধি করিব ; মহাপুরুষের সমস্ত সাধনা যাহাতে সার্থক হইয়াছে, সমাপ্ত হইয়াছে— সমস্ত কর্মের খণ্ডত, সমস্ত