পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«48 রবীন্দ্র-রচনাবলী সে ৰে ফল ফলাইবার উপলক্ষ্যমাত্র, সে কথা গোপন থাকে— বর্তমানের গৌরবেই সে প্রফুল্ল, ভবিষ্যৎ তাহাকে অভিভূত করিয়া দেয় না। আবার ফলকে দেখিলে মনে হয়, সেই ষেন সফলতার চূড়ান্ত । কিন্তু ভাবী তরুর জন্ত সে যে বীজকে গর্ভের মধ্যে পরিণত করিয়া তুলিতেছে, এ কথা অন্তরালেই থাকিয়া যায়। এমনি করিয়া প্রকৃতি ফুলের মধ্যে ফুলের চরমতা, ফলের মধ্যে ফলের চরমত রক্ষা করিয়াও তাঁহাদের অতীত একটি পরিণামকে অলক্ষ্যে অগ্রসর করিয়া দিতেছে। কাব্যরচনার সম্বন্ধেও সেই বিশ্ববিধানই দেখিতে পাই ; অন্তত আমার নিজের মধ্যে তাহা উপলব্ধি করিয়াছি । যখন যেটা লিখিতেছিলাম তখন সেইটেকেই পরিণাম বলিয়া মনে করিয়াছিলাম। এইজন্ত সেইটুকু সমাধা করার কাজেই অনেক যত্ন ও অনেক আনন্দ আকর্ষণ করিয়াছে । আমিই যে তাহা লিখিতেছি, এবং একটা কোনো বিশেষ ভাব অবলম্বন করিয়া লিখিতেছি, এ সম্বন্ধেও সন্দেহ ঘটে নাই। কিন্তু আজ জানিয়াছি সে-সকল লেখা উপলক্ষ্যমাত্র ; তাহারা যে অনাগতকে গড়িয়া তুলিতেছে সেই অনাগতকে তাহারা চেনেও না । তাহাদের রচয়িতার মধ্যে আর-একজন কে রচনাকারী আছেন যাহার সম্মুখে সেই ভাবী তাৎপর্য প্রত্যক্ষ বর্তমান। ফুংকার বাশির এক-একটা ছিদ্রের মধ্যে দিয়া এক-একটা স্বর জাগাইয়া তুলিতেছে এবং নিজের কর্তৃত্ব উচ্চস্বরে প্রচার করিতেছে, কিন্তু কে সেই বিচ্ছিন্ন স্থরগুলিকে রাগিণীতে বাধিয়া তুলিতেছে। ফু স্বর জাগাইতেছে বটে, কিন্তু ফু তো বাশি বাজাইতেছে না ? সেই বাশি যে বাজাইতেছে তাহার কাছে সমস্ত রাগরাগিণী বর্তমান আছে, তাহার অগোচরে কিছুই बांझे ॥ বলিতেছিলাম বসি এক ধারে আপনার কথা আপন জনারে, শুনাতেছিলাম ঘরের দুয়ারে ঘরের কাহিনী যত— তুমি সে ভাষারে দহিয়া অনলে ডুবায়ে ভাসায়ে নয়নের জলে নবীন প্রতিমা নব কৌশলে গড়িলে মনের মতো। এই শ্লোকটার মানে বোধ করি এই যে, যেটা লিখিতে যাইতেছিলাম সেট সাদ কথা, সেটা বেশি কিছু নহে, কিন্তু সেই সোজা কথা— সেই আমার নিজের কথার মধ্যে এমন একটা স্বর আসিয়া পড়ে যাহাতে তাহ বড়ো হইয় ওঠে, ব্যক্তিগত না হইয়