পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী ব্ৰত ধান উপবাসে আহ্নিকে তর্পণে কুড়াইয়া শত ব্ৰাহ্মণের পদধূলি ; শুনে রামায়ণ-কথা ; সন্ন্যাসী সাধুরে বিশ্বমাঝে আপনারে রাখি সর্বনীচে সবার প্রসন্নদৃষ্টি অভাগী মাগিছে আপন সন্তান লাগি । সূর্য চন্দ্র হতে পশুপক্ষী পতঙ্গ অবধি কোনোমতে কেহ পাছে কোনো অপরাধ লয় মনে, পাছে কেহ করে ক্ষোভ, অজানা কারণে পাছে কারো লাগে ব্যথা- সকলের কাছে আকুল-বেদনা-ভরে দীন হয়ে আছে । যখন বছর দেড় বয়স শিশুর দেহখানি শীর্ণ হয়ে আসে । দেবালয়ে করাইল পান, হরিসংকীর্তন-গানে কঁপিল প্ৰাঙ্গণ । ব্যাধি শান্তি নাহি মানে । কাদিয়া শুধালো নারী, ‘ব্ৰাহ্মণ ঠাকুর, এত দুঃখে তবু পাপ নাহি হল দূর ? দিয়েছি। এত যে পূজা। তবু রক্ষা নাই ? তবু কি নেবেন তারা আমার বাছারে ? এত ক্ষুধা দেবতার ? এত ভারে ভারে নৈবেদ্য দিলাম খেতে বেচিয়া গহনা, সর্বস্ব খাওয়ানু, তবু ক্ষুধা মিটিল না ?” ব্ৰাহ্মণ কহিল, “বাছা, এ যে ঘোর কলি ! অনেক করেছ বটে। তবু এও বলি, আজকাল তেমন কি ভক্তি আছে কারো ? সত্যযুগে যা পারিত তা কি আজ পারো ? দানবীর কণা-কাছে ধর্ম যবে এসে পুত্রেীরে চাহিল খেতে ব্ৰাহ্মণের বেশে, নিজহস্তে সস্তানে কাটিল ; তখনি সে । শিশুরে ফিরিয়া পেল চক্ষের নিমেষে । শিবিরাজা শোনরূপী ইন্দ্রের মুখেতে । আপন বুকের মাংস কাটি দিল খেতে, পাইল অক্ষয় দেহ । নিষ্ঠা এরে বলে । তেমন কি এ কালেতে আছে ভূমণ্ডলে ?