পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

08 R রবীন্দ্র-রচনাবলী । আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন ? মাপ করবেন, ঐট পারব না। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে পেটের জ্বালায় মরছি, ঠিক যেই খাবারটি আসবার সময় হল অমনি আপনি গাল দিচ্ছেন বলেই যে বাড়ি ছেলে চলে যাব আমাকে তেমন গর্দভ ঠাওরাবেন না । আপনি ঐখানেই বসুন, যা যা বলবার অভিপ্ৰায় আছে বলে যান, আমি আহারান্তে বাড়ি ছেড়ে যাব । বিকে বকে আমার গলা শুকিয়ে এল, আর তো বঁচি নে । খিদেয় নাড়িগুলো বেবাক হজম হয়ে গেল। ঐ-যে পায়ের শব্দ ! ওহে উদয়, আমার অন্ধের নড়ি, আমার সাগর-সেঁচা সাত রাজার ধন মানিক, একবার উদয় হও হে! আর তো প্রাণ বীচে না। তুমি আবার কে হে ? যদি গালমন্দ দেবার থাকে তো ঐখানে বসে আরম্ভ করে দাও। দােহার্কি করবার অনেকগুলি লোক উপস্থিত আছেন । হরিবাবু আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন ? শুনে বড়ো সন্তোষ লাভ করলুম। তিনি আমাকে খুব ভালোবাসেন সন্দেহ নেই, কিন্তু আমার পরম বন্ধু র্যারা আমাকে নিমন্ত্রণ করে পাঠিয়েছেন তাদের কোনাে দেখাসাক্ষাৎ নেই। আর র্যাদের সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনাে পরিচয় নেই তারা যে আজ প্ৰাতঃকাল থেকে আমাকে এত ঘন ঘন খাতির করছেন এর কারণ কি ? আচ্ছা মশায়, হরিবাবু-নামক কোনো একটি ভদ্রলোক আমাকে কেন এমন অসময়ে স্মরণ করলেন এবং হঠাৎ এতই অধৈর্য হয়ে উঠলেন বলতে পারেন কি ? ? কী ! আমি আমার স্ত্রীর বালা গড়াবার জন্যে তীর কাছ থেকে নমুনাস্বরূপ গহনা এনে ফিরিয়ে দিচ্ছি। নে ? দেখো, এ সম্বন্ধে আমার অনেকগুলি কথা বলবার ছিল, কিন্তু আপাতত একটি বললেই যথেষ্ট হবে— আমি কারও কাছ থেকে কোনো গহনা আনি নি এবং আমার স্ত্রীই নেই। প্রধান প্রধান কথা আর যা বলবার ছিল সে আজকের মতো মাপ করবেন— গলা শুকিয়ে তৃষ্ণায় ছাতি ফোেট। মরছি। আপনি আর আধা ঘণ্টা কাল অপেক্ষা করুন, সমস্ত সমাচার অবগত হবেন । (উচ্চৈঃস্বরে) ওরে উদয়, ওরে উদ্যো, ওরে লক্ষ্মীছাড়া হতভাগা পাজি খুঁচো ড্যাম শুয়ার ইস্টুপিড- ওরে পেট যে জ্বলে গেল, গলা যে শুকিয়ে যায়, মাথা যে ফেটে যাচ্ছে- ওরে নরাধম, কুলাঙ্গার ! / আরে না মশায় ! আপনাদের সম্ভাষণ করছি নে । আপনারা হঠাৎ চঞ্চল হবেন না । আমি পেটের জ্বালায়, মনের খেদো, আমার প্রাণের বন্ধুকে ডাকছি। আপনারা বসুন। আর বসতে পারছেন না ? অনেক দেরি হয়ে গেছে ? সে কথা আর আমাকে বলতে হবে না । দেরি হয়েছে সন্দেহ নেই। তা হলে আপনাদের আর পীড়াপীড়ি করে ধরে রাখতে চাই নে। তবে আজকের মতো আপনারা আসুন । আপনাদের সঙ্গে মিষ্টীলাপে এতক্ষণ সময়টা বেশ সুখে কেটেছিল। কিন্তু, এখন যে-কথাগুলো বলছেন। ওগুলো কিছু অধিক পরিমাণেই বলছেন। খুব পরম বন্ধুকেও মানুষ ভালোবেসে শ্যালক সম্ভাষণ করতে হঠাৎ কুষ্ঠিত হয়, কিন্তু আপনাদের সঙ্গে অতি অল্পক্ষণের আলাপেই যে আপনারা এতটা বেশি ঘনিষ্ঠত আত্মীয়তা করছেন সেজন্যে আমি মনে মনে কিছু লজাবোধ করছি । জানবেন আপনাদের প্রতি আমার আন্তরিক কোনোরকম অসদ্ভাব নেই, কিন্তু আপনারা আমার কাছে যতটা প্ৰত্যাশা করছেন। আমি ততটা দিতে একেবারে অক্ষম | মশায়রা আর বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনারা বোধ হয় দু বেলা নিয়মিত আহার করে থাকেন, খিদে পেলে মানুষের মেজাজটা কিরকম হয় ঠিক জানেন না, তাই আমাকে এমন অবস্থায় ঘটাতে সাহস করছেন। আবার ! ফের ! দেখো বাপু, আমার সঙ্গে পারবে না। শরীরটা দেখেই বুঝতে পারছি না ! বহু কষ্ট রাগ চেপে আছি, পাছে একটা খুনোখুনি কাণ্ড করে বসি । আচ্ছা, আমাকে রাগও দেখি। দেখি তোমাদের কত ক্ষমতা। কিছুতেই রাগাতে পারবে না। এই দেখাে আমি খুব গভীর হয়ে ঠাণ্ডা হয়ে বসলুম। : ጳ' ও বাবা ! এরা যে সবাই মিলে মারধোর করবার জোগাড় করে !! খালি পেটে, খিদের উপর, মারটা সয় না দেখছি। আচ্ছা বাপু, তোমরা সবাই বোসে । তোমাদের কার কত পাওনা আছে বলে |——