পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

988 , রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্যয়টা তোমার স্কন্ধে পড়বে— আগে থাকতে বলে রাখলুম। : চন্দ্ৰ, তুমি আঁবার হাত বাড়াও কেন হে! তোমাদের কল্যাণে যেরকম সস্তায় আজ নেমস্তন্ন খেয়ে গেলুম বহুকাল আমার আর খিদে থাকবে না। আরো কী চাও ? ও! বকশিশ! সেটা চুকিয়ে দেওয়াই ভালো। যখন এতই করলেম তখন সর্বশেষে ঐ খুঁতটুকু আর রাখব না। কিন্তু আমার কাছে আর একটিমাত্র টাকা বাকি আছে। তার মধ্যে বারো-আনা আমি গাড়িভাড়ার জন্যে রেখে দিতে চাই। তোমার কাছে খুচরো, যদি কিছু থাকে তা হলে ভাঙিয়ে— খুচরো নেই ? (পকেট উলটাইয়া শেষ টাকাটি দিয়া।) তবে এই নাও বাপু । তোমাদের বাড়ি থেকে বেরোলুম একেবারে গজভুক্তকপিখবৎ । কিন্তু এই-যে টাকাগুলি দিলুম, উদয়ের কাছ থেকে ফিরে আদায় করবার কী উপায় করা যায়! একটা দামি জিনিস যদি কিছু পাওয়া যায় তো আটক করে রাখি। দামি জিনিসের মধ্যে তো দেখছি ঐ চন্দ্ৰকান্ত ; কিন্তু যেরকম দেখলুম ওঁকে সংগ্ৰহ করা আমার কর্ম নয়, আমাকে উনি ট্যাকে গুজে নিতে / १°त | " (কোণে একটা দেরাজ সবলে খুলিয়া) বাঃ, এই তো ঠিক হয়েছে। চেনািটও দিব্যি। তা হলে ঘড়িসুদ্ধ এইটি দখল করা যাক । g: কী হে চন্দ্ৰ, এত ব্যস্ত কেন ? পুলিস ! পুলিস আসছে ? 鸭 আমাকে পালাতে হবে ? কেন, কী দুষ্কর্ম করেছি! কেবল এক ভদ্রলোকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছি, তার যা শান্তি যথেষ্ট হয়েছে। তাই তাে সত্যিই দেখছি! চন্দ্র কোথায় গেল ! হরিবাবুর সেই লােকটিকেও যে দেখছি নে! সবাই পালিয়েছে । দেখো বাপু, গায়ে হাত দিয়ে না। ভালো হবে না। আমি ভদ্রলোক। চাের নই, জালিয়াত নই। উঃ, কর কী ! লাগে যে ! বাবা, আজ সমস্ত দিন কেবল মুড়ি খেয়ে পথ চেয়ে আছি, আজ তোমাদের এ-সব ঠাট্টা আমার ভালো লাগছে না। পেয়াদা-বাবা, বরঞ্চ কিছু জলপানি নাও । (পকেটে হাত দিয়া) হায় হায়, একটি পয়সা নেই। দারোগ-সাহেব, যদি চাের ধরতে চাও, চলো আমি তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। জেল সৃষ্টি হয়ে পর্যন্ত এতবড়ো চাের পৃথিবীতে দেখা দেয় নি। কী করেছি বলে দেখি । জীবনবাবুর নাম সই করে হ্যামিলটনের দােকান থেকে ঘড়ি এনেছি ? পেয়াদা-সাহেব, ভদ্রলোক হয়ে ভদ্রলোকের নামে ফস করে এতবড়ো অপবাদটা দিলে ? ও কী ও ! ওটা ধরে টেনো না । ও আমার ঘড়ি নয় । শেষকালে যদি চেন-মেন ছিড়ে যায় তা হলে আবার মুশকিলে পড়তে হবে। কী ? এই সেই হ্যামিলটনের ঘড়ি ? ও বাবা, সত্যি নাকি! তা, নিয়ে যাও, নিয়ে যাও,এখনই নিয়ে যাও। কিন্তু, ঘড়ির সঙ্গে আমাকে সুদ্ধ টান কেন ? আমি তো সোনার চেন নই। আমি সোনার অক্ষয় বটে, কিন্তু সেও কেবল বাপ-মায়ের কাছে । তা, নিতান্তই যদি না ছাড়তে পার তো চলো । বাবা, আমাকে সবাই ভালোবাসে, আজ তার বিস্তর পরিচয় পেয়েছি, এখন তােমার ম্যাজিষ্ট্রেটের ভালোবাসা কোনােমতে এড়াতে পারলে এ যাত্র রক্ষে 에한 I এমনি বিনি। পয়সায় ভোজ । পৌষ ১৩০০