পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক ७8१ ভালো পণ্ডিতদের কাছে বলে দেখি। তারা তখনই মুখের উপর শুনিয়ে দেবে, যাট হাজার সগরসন্তান জ্বলে ভস্ম হয়ে গিয়েছিল, সেই ভস্মে যিনি প্রাণ দিয়েছেন, তিনি যে তোমার হাড় জ্বালাবেন এ কথা কোনো শাস্ত্রের সঙ্গেই মিলছে না। তুমি গাল দাও, আমি আমার ভক্তদের কাছে চললুম। (বাহিরে আসিয়া) দেরি হয়ে গেল। বাড়ির মধ্যে ঐয়ারা সব আবার কিছুতেই ছাড়েন না, পায়ের ধুলো নিয়ে পুজো করে বেলা করে দিলেন। আমি বলি, থাক থাক, আর কােজ নেই- তারা কি ছাড়ে ! এসো, তোমরা একে একে এসো, যার যার ধুলো নেবার আছে নিয়ে বাড়ি যাও— কী হে বিপিন ? আজ মকদ্দমার দিন ? তা তো যেতে পারছি নে। দর্শন করতে সব লোকজন আসছে। এক-তরফা ডিক্রি হবে ? কী করব বলে। আমি উপস্থিত না থাকলে এখানেও যে এক-তরফা হয়। বিপনে, তুই যাবার সময় প্ৰণাম করে গেলি নে ? এমনি করেই অধঃপাতে যাবে। আয়, এইখানে গড় কর, এই নে, ধুলো নে । যা । छूऊँीन अक ওহে মুখুজে, মা গঙ্গা ঠিক আমার এই খিড়কির কাছটায় না এসে আর রশি দুয়েক তফাতে এলেই ভালো করতেন। তুমি তো দাদা, স্বপ্ন দেখেই সারলে, আমাকে যে দিনরাত্তির অসহ্য ভোগ ভুগতে হচ্ছে। এক তো, পুকুরের জল দুধে বাতাসায় ডাবে আর পদ্মের পাতায় পচে দুৰ্গন্ধ হয়ে উঠেছে, মাছগুলো মরে মরে ভেসে উঠছে, যেদিন দক্ষিণের বাতাস দেয় সেদিন মনে হয় যেন নরককুণ্ডুর দক্ষিণের জানলা-দরজাগুলো সব কে খুলে দিয়েছে- সাত জন্মের পেটের ভাত উঠে আসবার জো হয়। ছেলেগুলো যে কাঁটা দিন ছিল কেবল ব্যামোয় ভুগেছে। কলিযুগের ভগীরথ হয়ে ডাক্তারের ফি দিতে দিতেই সর্বস্বাস্ত হতে হল ; তারা সব যমদূত, ভক্তির ধার ধারে না, স্বয়ং মা গঙ্গাকে দেখতে এলে পুরো ভিজিট আদায় করে ছাড়ে। সেও সহ্য হয়, কিন্তু খিড়কির ধারে ঐ-যে দেশ-বিদেশের মড়া পুড়তে আৱম্ভ হয়েছে ঐটিতে আমাকে কিছু কাবু করেছে। অহৰ্নিশি চিতা জ্বলছে। কাছাকাছি যে-সমস্ত বসতি ছিল সে-সমস্তই উঠে গেছে ; রাত্তিরে যখন হরবােল হরিবােল শব্দ ওঠে এবং শেয়ালগুলো ডাকতে থাকে তখন রক্ত শুকিয়ে যায় । স্ত্রী তো বাপের বাড়ি চলে গেছেন। বাড়িতে চাকর-দাসী টিকতে পারে না। ভূতের ভয়ে দিনে-দুপুরে দাঁতকপাটি খেয়ে খেয়ে পড়ে। চারটি রোধে দেয় এমন লোক পাই নে । রাত্তিরে নিজের পায়ের শব্দ শুনলে বুকের মধ্যে দুড় দুড় করতে থাকে ; বাড়িতে জনমানব নেই ; গঙ্গাযাত্রীর ঘর থেকে কেবল থেকে থেকে তারক-ব্ৰহ্ম নাম শুনি, আর গা ছমছম করতে থাকে। আবার হয়েছে কী ; ছেড়েও যেতে পারি নে। আমার ভগীরথ নাম চতুর্দিকেই রাষ্ট্র হয়ে গেছে ; সকলেরই দর্শন করতে ইচ্ছা হয়— সেদিন পশ্চিম থেকে দুজন এসেছিল, তাদের কথাই বুঝতে পারি নে। বেটারা ভক্তি করলে বটে, কিন্তু আমার থালাবাটিগুলো চুরিও করে গেছে। এখান থেকে উঠে গেলে হয়তো ঠিকানা না পেয়ে অনেকে ফিরে যেতে পারে। এ দিকে আবার বিষয়কর্ম দেখতে সময় পাচ্ছি নে ; আমার পত্তনি তালুকটার খাজনা বাকি পড়েছে, শুনেছি জমিদার অষ্টম করবে। শরীর ভয়ে অনিয়মে এবং ব্যামোয় রোজ শুকিয়ে যাচ্ছে । ডাক্তারে ভয় দেখাচ্ছে। এ জায়গা না ছাড়লে আমি আর বেশিদিন বীচব না। কী করি বলে তো দাদা ? রুদন্দুর বকশি ছিলুম, সুখে ছিলুম, কোনো ল্যাঠাই ছিল না ; ভগীরথ হয়ে কোনাে দিক সামলে উঠতে পারছি নে, আমার সোনার পুরী একেবারে শ্মশান হয়ে গেছে! আবার কাগজগুলো আজকাল আমার সঙ্গে লেগেছে ; তারা বলে সব মিথ্যে। তাদের নামে লাইবেল আনবার জন্যে উকিলের পরামর্শ নিতে গিয়েছিলুম ; উকিল বললেন, তুমিই যে ভগীরথ সেটা প্রমাণ করতে গেলে সত্যযুগ থেকে সাক্ষী তলব করতে হয়, স্বয়ং ব্যাসদেবের নামে সমান জারি করতে হয় । শুনে আমার ভরসা হল না । এখানকার লোকের মনেও ক্রমে সন্দেহ জন্মে গেছে। মতি গয়লানীর সঙ্গে একরকম ঠিক হয়েছিল আমি পাদোদক দেব আর সে দুধ দেবে, আজ দু দিন থেকে সে মাগী আবার তার হিসেব নিয়ে এসে উপস্থিত হয়েছে ;