পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪৮ । রবীন্দ্র-রচনাবলী ভাবে গতিকে স্পষ্ট বুঝতে পারছি টাকার বদলে আমি তাকে পায়ের ধুলো দিতে গেলে সেও আমার উপরে পায়ের ধুলো ঝেড়ে যাবে। ভয়ে কিছু বলতে পারছি নে। পুকুরটা তো গেছেই, আমার স্ত্রী-পুত্ৰ-কন্যারাও ছেড়ে গেছে, চাকর-দাসীও পালিয়েছে, প্রতিবেশীরাও গ্রাম ছেড়ে নতুন বসতি করেছে, আমার ভগীরথ নামটাও টেকে কি না সন্দেহ, কেবল কি একা মা গঙ্গা আমাকে কিছুতেই ছাড়বেন না ? মা গঙ্গাকে নিয়ে কি আমার সংসার চলবে ? রাস্তায় বেরোলে আজকাল ছেলেগুলো ঠাট্টা করতে আরম্ভ করেছে যে, রুদন্দুর বকশির গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়েছে!— এই তো বিপদে পড়া গেছে। দাদা, আবার একবার তোমাকে স্বপন দেখতে হচ্ছে। দােহাই তোমার, দােহাই মা গঙ্গার, হুগলির পুলের নীচে যদি তার বাসের অসুবিধে হয়, দেশে বড়ো বড়ো বিল খাল দিঘি রয়েছে, স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবেন। আমার ঐ পুকুরের জল যেরকম হয়ে এসেছে আর দুদিন বাদে তীর মকরটা তার শুড়সুদ্ধ মরে ভেসে উঠবে ; আমার মতো ভগীরথ ঢের মিলবে, কিন্তু ব্ৰাহ্মণ-কায়স্থের ঘরে অমন বাহন আর পাবেন না। এই নতুন গঙ্গার ধারে তীর মেহের ভগীরথও যে বেশিদিন টিকবে কোনো ডাক্তারেই এমন আশা দেয় না। সত্যযুগের নামটার জন্যে মায়া হয় বটে, কিন্তু আমি বেশ করে ভেবে দেখেছি, দাদা, এই কলিযুগের প্রাণটার মায়াও ছাড়তে পারি নে। তাই স্থির করেছি। পুষ্করিণীটি তোমাকেই ফিরিয়ে দেব, কিন্তু গঙ্গা-মাতাকে এখান থেকে একটু দূরে বসত করতে হবে। পৌষ ১৩০১ অরসিকের স্বৰ্গপ্ৰাপ্তি গৈাকুলনাথ দত্ত । ইন্দ্ৰলোক গোকুলনাথ । (স্বগত) আমি দেখছি স্বর্গটি স্বাস্থ্যের পক্ষে দিব্য জায়গা হয়েছে। এ সম্বন্ধে প্রশংসা না করে থাকা যায় না। অনেক উচ্চে থাকার দরুন অক্সিজেন বাষ্পটি বেশ বিশুদ্ধ পাওয়া যায়, এবং রাত্রিকাল না থাকতে নন্দনবনের তরুলতাগুলি কার্বনিক অ্যাসিড গ্যাস পরিত্যাগ করবার সময় পায় না, হাওয়াটি বেশ পরিষ্কার। এ দিকে ধুলো নেই, তাতে করে একেবারে রোগের বীজই নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এখানে বিদ্যাচর্চার যেরকম অবহেলা দেখছি তাতে আমি সন্দেহ করি ধুলোয় রোগের বীজ উড়ে বেড়ায় এ সংবাদ এখনো এদের কানে এসে পীেচেছে কি না । এঁরা সেই- যে এক সামবেদের গাথা নিয়ে পড়েছেন, এর বেশি আর ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট অগ্রসর হল না। পৃথিবী দ্রুতবেগে চলছে, কিন্তু श्र्श एशभन्न श्लि (ठभनििश् ब्राशाछ, कमभाएर्डफैिङ शङ नृद्ध शङ श्श । (বৃহস্পতির প্রতি) আচ্ছা পণ্ডিতমশায়, ঐ-যে সামবেদের গান হচ্ছে, আপনারা তো বসে বসে মুগ্ধ হয়ে শুনছেন, কিন্তু কোন সময়ে ওর প্রথম রচনা হয় তার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ সংগ্ৰহ করতে পেরেছেন কি ? কী বললেন ? স্বৰ্গে আপনাদের ইতিহাস নেই ? আপনাদের সমস্তই নিত্য ? সুখের বিষয়। সুরবালকদের তারিখ মুখস্থ করতে হয় না ! কিন্তু, বিদ্যাচর্চা ওতে করে কি অনেকটা অসম্পূর্ণ থাকে না ? ইতিহাসশিক্ষার উপযোগিতা চার প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে।-- প্রথম, حسسة মনােযোগ দিচ্ছেন কি ?- (স্বগত) গান শুনতেই মত্ত, তার আর মন দেবে কী করে ? পৃথিবী ছেড়ে অবধি এঁদের কাউকে যদি একটা কথা শোনাতে পেরে থাকি ! শুনছে কি না শুনছে মুখ দেখে কিছু বোঝবার জো নেই ; একটা কথা বললে কেউ তাঁর প্রতিবাদও করে না, এবং কারও কথার কোনাে প্রতিবাদ করলে তার একটা জবাব পাওয়াই যায় না। শুনেছি। এইখানেই আমাকে সাড়ে পীচ কোটি সাড়ে পনেরো লক্ষ বৎসর কাটাতে হবে। তা হলেই তো গেছি। আত্মহত্যা করে যে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে সে সুবিধাও নেই। এখানকার সাপ্তাহিক মৃত্যুতালিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে শুনলুম,