পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শারদোৎসব । VS l ছেলেরা। তােমার কত দিনের ছুটি ? সন্ন্যাসী। খুব অল্প দিনের। আমার গুরুমশায় তাড়া করে বেরিয়েছেন, তিনি বেশি দূরে নেই— এলেন বলে। ছেলেরা । ও বাবা, তোমারও গুরুমশায় ! - প্রথম বালক । সন্ন্যাসীঠাকুর, চলে আমাদের যেখানে হয় নিয়ে চলো। তোমার যেখানে খুশি । ঠাকুরদাদা। আমিও পিছনে আছি। ঠাকুর, আমাকেও ভুলো না । ' ' সন্ন্যাসী । আহা, ও ছেলেটি কে ? গাছের তলায় এমন দিনে পুঁথির মধ্যে ডুবে রয়েছে! বালকগণ । উপনন্দ | প্রথম বালক। ভাই উপনন্দ, এসো ভাই! আমরা আজ সন্ন্যাসীঠাকুরের চেলা সেজেছি, তুমিও { চলে আমাদের সঙ্গে । তুমি হবে সর্দার চেলা । উপনন্দ । না ভাই, আমার কাজ আছে। : ছেলেরা । কিছু কােজ নেই, তুমি এসো । উপনন্দ । আমার পুঁথি নকল করতে অনেকখানি বাকি আছে। ছেলেরা । সে বুঝি কাজ ! ভারি তো কাজ !— ঠাকুর, তুমি ওকে বলো-না। ও আমাদের কথা শুনবে না । কিন্তু উপনন্দকে না হলে মজা হবে না । সন্ন্যাসী । (পাশে বসিয়া) বাছা, তুমি কী কাজ করছ? আজ তো কাজের দিন না। উপনন্দ । (সন্ন্যাসীর মুখের দিকে ক্ষণকাল চাহিয়া, পায়ের ধূলা লইয়া) আজ ছুটির দিন। কিন্তু আমার ঋণ আছে, শোধ করতে হবে, তাই আজ কাজ করছি । ঠাকুরদাদা । উপনন্দ, জগতে তোমার আবার ঋণ কিসের ভাই ? উপনন্দ । ঠাকুরদাদা, আমার প্রভু মারা গিয়েছেন, তিনি লক্ষেশ্বরের কাছে ঋণী— সেই ঋণ আমি পুঁথি লিখে শোধ দেব। " ঠাকুরদাদা । হায় হায়, তোমার মতো কঁচা বয়সের ছেলেকেও ঋণ শোধ করতে হয়! আর, এমন । দিনেও ঋণশোধ !— ঠাকুর, আজ নতুন উত্তরে হাওয়ায় ও পারে কাশের বনে ঢেউ দিয়েছে, এ পারে ধানের খেতের সবুজে চােখ একেবারে ডুবিয়ে দিলে, শিউলিবন থেকে আকাশে আজ পুজোর গন্ধ ভরে উঠেছে, এরই মাঝখানে ঐ ছেলেটি আজ ঋণশোধের আয়োজনে বসে গেছে- এও কি চক্ষে দেখা যায় ? সন্ন্যাসী। বল কী, এর চেয়ে সুন্দর কি আর কিছু আছে! ঐ ছেলেটিই তো আজ সারদার বরপুত্ৰ হয়ে তীর কোল উজ্জ্বল করে বসেছে। তিনি তীর আকাশের সমস্ত সোনার আলো দিয়ে ওকে বুকে চেপে ধরেছেন। আহা, আজ এই বালকের ঋণশোধের মতো এমন শুভ্র ফুলটি কি কোথাও ফুটেছে— চেয়ে দেখে তো ! লেখে, লেখে বাবা, তুমি লেখে, আমি দেখি । তুমি পঙক্তির পর পঙক্তি লিখছ, আর ছুটির পর ছুটি পািচ্ছ। তোমার এত ছুটির আয়োজন আমরা তো পণ্ড করতে পারব না। দাও বাবা, একটা পুঁথি আমাকে দাও, আমিও লিখি। এমন দিনটা সার্থক হােক । ঠাকুরদাদা। আছে আছে, চশমাটা ট্যাকে আছে, আমিও বসে যাই না। প্রথম বালক । ঠাকুর, আমরাও লিখব। সে বেশ মজা হবে। দ্বিতীয় বালক । হা হাঁ, সে বেশ মজা হবে । উপনন্দ। বল কী ঠাকুর, তোমাদের যে ভারি কষ্ট হবে। ጿ সন্ন্যাসী । সেইজন্যেই বসে গেছি। আজ আমরা সব মজা করে কষ্ট করব । কী বল বাবা-সকল ? আজ একটা-কিছু কষ্ট না করলে আনন্দ হচ্ছে না । , + সকলে । (হাততালি দিয়া) ই হী, নইলে মজা কিসের ! প্রথম বালক। দাও দাও, আমাকে একটা পুঁথি দাও। দ্বিতীয় বালক । আমাকেও একটা দাও-মা ।