পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\oby: রবীন্দ্র-রচনাবলী করে তাড়িয়ে দিলেন। সেদিন সকালে সেইখানে বসে আমার প্রভু বীণা বাজাচ্ছিলেন। তিনি তখনই মন্দির ছেড়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন ; বললেন, এসে বাবা, আমার ঘরে এসো। সেই দিন থেকে ছেলের মতো তিনি আমাকে কাছে রেখে মানুষ করেছেন ; লোকে তীকে কত কথা বলেছে, তিনি কান দেন নি। আমি তাকে বলেছিলেম, প্রভু, আমাকে বীণা বাজাতে শেখান, আমি তা হলে কিছু কিছু উপার্জন করে আপনার হাতে দিতে পারব। তিনি বললেন, বাবা, এ বিদ্যা পেট ভরাবার নয় ; আমার আর-এক বিদ্যা জানা আছে, তাই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। এই বলে আমাকে রঙ দিয়ে চিত্র করে পুঁথি লিখতে শিখিয়েছেন। যখন অত্যন্ত অচল হয়ে উঠত। তখন তিনি মাঝে মাঝে বিদেশে গিয়ে বীণা বাজিয়ে টাকা নিয়ে আসতেন । এখানে তাকে সকলে পাগল বলেই জানত । সন্ন্যাসী । সুরসেনের বীণা শুনতে পেলেম না, কিন্তু বাবা উপনন্দ, তোমার কল্যাণে তীর আর-এক বীণা শুনে নিলুম, এর সুর কোনোদিন ভুলব না। — বাবা, লেখো, লেখে । ছেলেরা। ঐ রে, ঐ আসছে! ঐ রে লখা, ঐ রে লক্ষ্মীপেঁচা ! (arv লক্ষেশ্বর। আ সর্বনাশ ! যেখানটিতে আমি কীেটাে পুঁতে রেখেছিলুম ঠিক সেই জায়গাটিতেই যে উপনন্দ বসে গেছে ? আমি ভেবেছিলেম ছাড়াটা বোকা বুঝি, তাই পরের ঋণ শুধতে এসেছে! তা তো নয় দেখছি। পরের ঘাড় ভঙাই ওর ব্যাবসা | আমার গজমোতির খবর পেয়েছে। একটা সন্ন্যাসীকেও কোথা থেকে জুটিয়ে এনেছে দেখছি। সন্ন্যাসী হাত চেলে জায়গাটা বের করে দেবে।— উপনন্দ | উপনন্দ। কী ? r লক্ষেশ্বর। ওঠ, ওঠ ঐ জায়গা থেকে ! এখানে কী করতে এসেছিস ? উপনন্দ । অমন করে চোখ রাঙাও কেন ? এ কি তোমার জায়গা নাকি ? p লক্ষেশ্বর। এটা আমার জায়গা কি না সে খোজে তোমার দরকার কী হে বাপু ? ভারি সেয়ানা দেখছি! তুমি বড়ো ভালোমানুষটি সেজে আমার কাছে এসেছিলো! আমি বলি সত্যিই বুঝি প্রভুর ঋণ শোধ করবার জন্যেই ছোড়াটা আমার কাছে এসেছে- কেননা, সেটা রাজার আইনেও আছে উপনন্দ । আমি তো সেইজন্যেই এখানে পুঁথি লিখতে এসেছি। লক্ষেশ্বর। সেইজন্যেই এসেছ বটে ! আমার বয়স কত আন্দাজ করছ বাপু ! আমি কি শিশু ! সন্ন্যাসী। কেন বাবা, তুমি কী সন্দেহ কবছ ? লক্ষেশ্বর। কী সন্দেহ করছি! তুমি তা কিছু জান না ! বড়ো সাধু! ভণ্ড সন্ন্যাসী কোথাকার! ঠাকুরদাদা। আরে, কী বলিস লখা, আমার ঠাকুরকে অপমান! | - উপনন্দ । এই রঙবাটা নোড়া দিয়ে তোমার মুখ গুড়িয়ে দেব-না ! টাকা হয়েছে বলে অহংকার! কাকে কী বলতে হয় জান না ! ! সন্ন্যাসী। আরে, কর কী ঠাকুরদাদা ! কর কী বাবা! লক্ষেশ্বর তোমাদের চেয়ে ঢের বেশি মানুষ চেনে। যেমনি দেখেছে আমনি ধরা পড়ে গেছে! ভণ্ড সন্ন্যাসী যাকে বলে ! বাবা লক্ষেশ্বর, এত দেশের এত মানুষ ভুলিয়ে এলেম, তোমাকে ভোলাতে পারলেম না। ’ লক্ষেশ্বর। না, ঠিক ঠাওরাতে পারছি নে। হয়তো ভালো করি নি। আবার শাপ দেবে কি কী করবে ! তিনখানা জাহাজ এখনো সমুদ্রে আছে। (পায়ের ধূলা লইয়া) প্ৰণাম হাইঠাকুর ! হঠাৎ চিনতে পারি নি। বিরূপক্ষের মন্দিরে আমাদের ঐ বিকটানন্দ বলে একটা সন্ন্যাসী আছে, আমি বলি সেই ভণ্ডটাই বুঝি— ঠাকুর্দী, তুমি এক কাজ করো। সন্ন্যাসীঠাকুরকে আমার ঘরে নিয়ে যাও ; আমি ওঁকে কিছু ভিক্ষে দিয়ে দেব। আমি চললেম বলে। তােমরা এগোঁও।