পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী লক্ষেশ্বরের প্রবেশ লক্ষেশ্বর। ঠাকুর, তুমিই অপূর্বানন্দ ! তবে তো বড়ো অপরাধ হয়ে গেছে। আমাকে মাপ করতে হবে | সন্ন্যাসী । তুমি আমাকে ভণ্ড তপস্বী বলেছ। এই যদি তোমার অপরাধ হয় আমি তোমাকে মাপ করলেম | লক্ষেশ্বর। বাবাঠাকুর, শুধু মাপ করতে তো সকলেই পারে, সে ফাকিতে আমার কী হবে! আমাকে একটা-কিছু ভালোরকম বর দিতে হচ্ছে। যখন দেখা পেয়েছি তখন শুধু-হাতে ফিরছি নে । সন্ন্যাসী | কী বর চাই ? লক্ষেশ্বর । লোকে যতটা মনে করে ততটা নয়, তবে কিনা আমার অল্পস্বল্প কিছু জমেছে- সে অতি যৎসামান্য- তাতে আমার মনের আকাঙক্ষা তো মিটছে না । শরৎকাল এসেছে, আর ঘরে বসে থাকতে পারছি নে ; এখন বাণিজ্যে বেরোতে হবে । কোথায় গেলে সুবিধা হতে পারে আমাকে সেই সন্ধানটি বলে দিতে হবে ; আমাকে আর যেন ঘুরে বেড়াতে না হয় । সন্ন্যাসী । আমিও তো সেই সন্ধানেই আছি । লক্ষেশ্বর। বল কী ঠাকুর । সন্ন্যাসী । আমি সত্যই বলছি । লক্ষেশ্বর । ওঃ, তবে সেই কথাটাই বলে । বাবা, তোমরা আমাদের চেয়েও সেয়ানা | সন্ন্যাসী । তার সন্দেহ আছে ! লক্ষেশ্বর | (কাছে ঘেষিয়া বসিয়া মৃদুস্বরে) সন্ধােন কিছু পেয়েছ ? সন্ন্যাসী । কিছু পেয়েছি বৈকি । নইলে এমন করে ঘুরে বেড়াবা কেন ? লক্ষেশ্বর । (সন্ন্যাসীর পা চাপিয়া ধরিয়া) বাবাঠাকুর, আর-একটু খোলসা করে বলে । তোমার পা ছুঁয়ে বলছি আমিও তোমাকে একেবারে ফাঁকি দেব না। কী খুঁজব বলে তো, আমি কাউকে বলব না । সন্ন্যাসী । তবে শোনো ৷ লক্ষ্মী যে সোনার পদ্মটির উপরে পা দুখানি রাখেন আমি সেই পদ্মটির খোজে আছি । লক্ষেশ্বর ) ও বাবা, সে তো কম কথা নয় ! তা হলে যে একেবারে সকল ল্যাঠাই চোকে । ঠাকুর, ভেবে ভেবে এ তো তুমি আচ্ছা বুদ্ধি ঠাওরেছ ! কোনো গতিকে পদ্মটি যদি জোগাড় করে আন তা হলে লক্ষ্মীকে আর তোমার খুঁজতে হবে না, লক্ষ্মাই তোমাকে খুঁজে বেড়াবেন ! এ নইলে আমাদের চঞ্চলা ঠাকরুনটিকে তো জব্দ করবার জো নেই । তোমার কাছে তার পা দুখানিই বাধা থাকবে । তা, তুমি সন্ন্যাসী মানুষ, একলা পেরে উঠবে ? এতে তো খরচপত্র আছে। এক কাজ করো-না বাবা, আমরা ভাগে ব্যাবসা করি । সন্ন্যাসী । তা হলে তোমাকে যে সন্ন্যাসী হতে হবে । বহুকাল সোনা ছুতেই পাবে না। লক্ষেশ্বর । সে যে শক্ত কথা । সন্ন্যাসী { সব ব্যাবসা যদি ছাড়তে পার তবেই এ ব্যাবসা চলবে । লক্ষেশ্বর । শেষকালে দু কুল যাবে না তো ? যদি একেবারে ফাঁকিতে না পড়ি তা হলে তোমার তলপি বয়ে তোমার পিছন পিছন চলতে রাজি আছি। সত্যি বলছি ঠাকুর, কারো কথায় বড়ো সহজে বিশ্বাস করি নে ; কিন্তু তোমার কথাটা কেমন মনে লাগছে। আচ্ছা! আচ্ছা রাজি ! তােমার চেলাই হব !— ঐ রে, রাজা আসছে ! আমি তবে একটু আড়ালে দাড়াই গে । বন্দীগণের গান মিশ্র কানাড়া । ঝাঁপতাল রাজরাজেন্দ্র জয় জয়তু জয় হে ! ব্যাপ্ত পরতাপ তব বিশ্বময় হে !