পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vrby রবীন্দ্র-রচনাবলী লক্ষেশ্বর। তা নিক গে! কিন্তু, আমার কেবলই ভাবনা হয়, আমি মরে গেলে পর কোথা থেকে কে এসে হঠাৎ হয়তো খুঁড়তে খুঁড়তে ওটা পেয়ে যাবে। যাই হােক ঠাকুর, কিন্তু তোমার মুখে ঐ সোনার পদ্মর কথাটা আমার কাছে বড়ো ভালো লাগল। আমার কেমন মনে হচ্ছে, ওটা তুমি হয়তো খুঁজে বের করতে পারবে। কিন্তু তা হােক গে, আমি তােমার চেলা হতে পারব না। প্ৰণাম। [প্ৰস্থান ঠাকুরদাদার প্রবেশ সন্ন্যাসী। ঠাকুর্দা, আজ অনেক দিন পরে একটি কথা খুব স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি-- সেটি তােমাকে খুলে না বলে থাকতে পারছি নে । ঠাকুরদাদা। আমার প্রতি ঠাকুরের বড়ো দয়া । সন্ন্যাসী । আমি অনেক দিন ভেবেছি জগৎ এমন আশ্চর্য সুন্দর কেন । কিছুই ভেবে পাইনি। আজ স্পষ্ট প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি— জগৎ আনন্দের ঋণ শোধ করছে। বড়ো সহজে করছে না, নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সমস্ত ত্যাগ করে করছে। সেইজন্যেই ধানের খেত এমন সবুজ ঐশ্বর্যে ভরে উঠেছে, বেতসিনীর নির্মল জল এমন কানায় কানায় পরিপূর্ণ ! কোথাও সাধনার এতটুকু বিশ্রাম নেই, সেইজন্যেই এত সৌন্দর্য! ঠাকুরদাদা। এক দিকে অনন্ত ভাণ্ডার থেকে তিনি কেবলই ঢেলে দিচ্ছেন, আর-এক দিকে কঠিন দুঃখে তারই শোধ চলছে। সেই দুঃখের আনন্দ এবং সৌন্দর্য যে কী সে কথা তোমার কাছে পূর্বেই শুনেছি। প্ৰভু, কেবল এই দুঃখের জোরেই পাওয়ার সঙ্গে দেওয়ার ওজন বেশ সমান থেকে যাচ্ছে, মিলনটি এমন সুন্দর হয়ে উঠেছে। সন্ন্যাসী। ঠাকুর্দা, যেখানে আলস্য, যেখানে কৃপণতা, যেখানেই ঋণশোধে ঢিল পড়ে যাচ্ছে, সেইখানেই সমস্ত কুশ্ৰী, সমস্তই অব্যবস্থা । ঠাকুরদাদা। সেইখানেই যে এক পক্ষে কম পড়ে যায়, অন্য পক্ষের সঙ্গে মিলন পুরো হতে পায় ● | সন্ন্যাসী। লক্ষ্মী যখন মানবের মর্তলোকে আসেন তখন দুঃখিনী হয়েই আসেন ; তীর সেই সাধনার তপস্বিনীবেশেই ভগবান মুগ্ধ হয়ে আছেন ; শত দুঃখেরই দলে তীর সোনার পদ্ম সংসারে ফুটে উঠেছে, সে খবরটি আজ ঐ উপনন্দের কাছ থেকে পেয়েছি । লক্ষেশ্বরের প্রবেশ লক্ষেশ্বর । তোমরা চুপি চুপি দুটিতে কী পরামর্শ করছি ? সন্ন্যাসী । আমাদের সেই সোনার পদ্মের পরামর্শ । । লক্ষেশ্বর। অ্যা! এরই মধ্যে ঠাকুর্দার কাছে সমস্ত ফাঁস করে বসে আছ ? বাবা, তুমি এই ব্যাবসবুদ্ধি নিয়ে সোনার পদ্মর আমদানি করবে ? তবেই হয়েছে! তুমি যেই মনে করলে আমি রাজি হলেম না। আমনি তাড়াতাড়ি অন্য অংশীদার খুঁজতে লেগে গেছ! কিন্তু, এ-সব কি ঠাকুর্দার কর্ম ? ওঁর পুঁজিই বা কী ? সন্ন্যাসী । তুমি খবর পাও নি । কিন্তু, একেবারে পুঁজি নেই তা নয়। ভিতরে ভিতরে জমিয়েছে। লক্ষেশ্বর। (ঠাকুরদাদার পিঠ চাপড়াইয়া) সত্যি নাকি ঠাকুর্দা ? বড়ো তো ফাকি দিয়ে আসছি। তোমাকে তো চিনতোম না । লোকে আমাকেই সন্দেহ করে, তোমাকে তো স্বয়ং রাজাও সন্দেহ করে না- তা হলে এত দিনে খানাতল্লাশি পড়ে যেত। আমি তো, দাদা, গুপ্তচরের ভয়ে ঘরে চাকর-বাকর রাখি নে । । ঠাকুরদাদা। তবে যে আজ সকালে ছেলে তাড়াবার বেলায় উর্ধ্বস্বরে চােবে-তেওয়ারিগিরধারিলালকে হাঁক পড়েছিলে ?