পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. 800 যুবরাজ। সেনাপতি সাহেব, তোমার তলোয়ারও। যেমন তোমার জিহ্বাও তেমনি, দুইই খরধারযার উপর গিয়ে পড়ে তার একেবারে মর্মচ্ছেদ না করে ফেরে না । , রাজধর। দাদা, তুমি আমার জন্যে ভেবো না। খা সাহেব জিহ্বায় যতই শান দিন-না কেন আমার মর্মে আঁচড় কাটতে পারবেন না। - , ইশা খা । তোমার মর্ম পায় কে বাবা ! বড়ো শক্ত । ইন্দ্ৰকুমার। যেমন, হঠাৎ আজ রাত্রে তোমার শিকারে যাবার শখ হল, এর মর্ম ভালো বোঝা যাচ্ছে in যুবরাজ। আহা, ইন্দ্ৰকুমার ! প্রত্যেক কথাতেই রাজধারকে আঘাত করাটা তোমার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে । রাজধর । সে আঘাতে বেদনা না পাওয়াও আমার অভ্যাস হয়ে গেছে । ইন্দ্ৰকুমার। দাদা, আজ রাত্রে শিকারে যাওয়াই তোমার মত নাকি ? যুবরাজ। তোমার সঙ্গে, ভাই, শিকার করতে যাওয়াই বিড়ম্বনা। নিতান্ত নিরামিষ শিকার করতে হয়। তুমি বনে গিয়ে বড়ো বড়ো জন্তু মেরে আন, আর আমরা কেবল লাউ কুমড়ো কচু কঁঠাল শিকার করেই মারি । , ইশা খা। (ইন্দ্ৰকুমারের পিঠ চাপড়াইয়া) যুবরাজ ঠিক বলেছেন পুত্ৰ। তোমার তীর সকলের আগে ছোটে এবং নির্ঘাত গিয়ে লাগে- তোমার সঙ্গে পেরে উঠবে কে ! র। না দাদা, ঠাট্ট নয়। তুমি না গেলে কে শিকার করতে যাবে! রাজ। আচ্ছা, চলো। আজ রাজধরের ইচ্ছে হয়েছে, ওঁকে নিরাশ করব না। র। কেন দাদা, আমার ইচ্ছে হয়েছে বলে কি যেতে নেই ? রাজ। সে কী কথা ভাই, তোমার সঙ্গে তো রোজই যাচ্ছি! - র। তাই বুঝি পুরনো হয়ে গেছে ? রাজ। আমার কথা অমন উলটাে বুঝলে বড়ো ব্যথা লাগে । , ঠাট্টা করছিলুম— চলো প্রস্তুত হই গে। র বুকে দশটা বাণ সইতে পারে, কিন্তু দাদার সামান্য অনাদরটুকু সইতে পারে སྟོན་ལྟ་ [অনুচরগণ ব্যতীত সকলের প্রস্থান অনুচরগণ প্রথম। কথাটা তো ভালো ঠেকছে না হে। আমাদের ছােটাে কুমারের ধনুর্বিদ্যার দৌড় তো সকলেরই জানা আছে, উনি মধ্যম কুমারের সঙ্গে অস্ত্রপরীক্ষায় এগােতে চান এর মানে কী ? দ্বিতীয়। কেউ বা তীর দিয়ে লক্ষ্য ভেদ করে, কেউ বা বুদ্ধি দিয়ে। প্রথম। সেই তো ভয়ের কথা। অস্ত্রপরীক্ষায় অস্ত্র না চালিয়ে যদি বুদ্ধি চালাও সেটা যে দুষ্টবুদ্ধি। তৃতীয়। দেখো বংশী, অস্ত্রই চলুক আর বুদ্ধিই চলুক মাঝের থেকে তোমার ঐ জিভটিকে চালিয়ে না, আমার এই পরামর্শ। যদি টিকে থাকতে চাও তো চুপ করে থাকে। দ্বিতীয়। বনমালী ঠিক কথাই বলেছে। ঐ ছােটাে কুমারের কথা উঠলেই তুমি যা মুখে আসে তাই বলে ফেল। রাজার ছেলে- কে ভালো কে মন্দ সে বিচারের ভার আমাদের উপর নেই। তবে কিনা, আমাদের যুবরাজ বেঁচে থাকুন আর আমাদের মধ্যম কুমার ভাই লক্ষ্মণের মতো সর্বদা তীর সঙ্গে সঙ্গে থেকে তঁকে রক্ষে করুন, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করো। ছোটাে কুমারের কথা মুখে না আনাই ভালো । প্রথম । ইচ্ছে করে তো আনি নে। আমাদের মধ্যম কুমার সরল মানুষ, মনে তীর ভয়-ডরও নেই, পাক-চক্ৰও নেই- সর্বদাই ভয় হয় ঐ ধার নামটা করছি নে তিনি কখন তাকে কী ফেসাদে ফেলেন।