পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দূতের প্রবেশ দূত। যুবরাজ, শত্ৰুপক্ষ যুদ্ধে ক্ষান্ত হয়েছে। যুবরাজ। সে তো দেখতে পাচ্ছি। এর কারণ কী ? : 源 দূত। কারণ এখনাে জানতে পারি নি, কিন্তু শুনতে পেয়েছি আরাকান-রাজ আর আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন না বলে সংবাদ পাঠিয়েছেন। যুবরাজ। সুসংবাদ । আমার কেবল মনে একটি বেদনা বাজছে। ইন্দ্ৰকুমার। কিসের বেদনা দাদা ? যুবরাজ। রাজধর কেন সৈন্য নিয়ে চলে গেল! সে যদি থাকত তা হলে কী আনন্দের সঙ্গে আমরা তিন ভাই জয়ােৎসব করতে পারতুম। আজকের আমাদের জয়গীেরবের মধ্যে এই একটি মস্ত অভাব রয়ে গেল- রাজধর যুদ্ধে যোগ না দিয়ে আমাকে বড়ো দুঃখ দিয়েছে। , ইন্দ্ৰকুমার। জয়ের ভাগ না নিয়েই সে যদি পালিয়ে থাকে তাতে এমনি কী ক্ষতি হয়েছে দাদা ! যুবরাজ। না ভাই, আমরা তিন ভাই একত্রে বেরিয়েছি, বিজয়লক্ষ্মীর প্রসাদ আমরা ভাগ করে ভোগ না করতে পারলে আমার তো মনে দুঃখ থেকে যাবে। রাজধর যদি মাথা হেঁট করে বাড়ি ফেরে, আমাদের সৌভাগ্যে যদি তার মুখ বিমর্ষ হয়, তা হলে এই কীর্তি আমাকে কিছুমাত্ৰ সুখ দেবে না। — ঐ-যে ঘোড়া ছুটিয়ে সেনাপতি সাহেব আসছেন। ইন্দ্ৰকুমার। খ্যা সাহেব, শত্রুসৈন্য হঠাৎ যুদ্ধ থামিয়ে দিলে কেন তার কোনো খবর পেয়েছ ? ইশা খা । পেয়েছি। বৈকি। রাজধর আরাকান-রাজকে বন্দী করেছে। ইন্দ্ৰকুমার। রাজধর ! মিথ্যা কথা ! •ዱ l ইশা খা । যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল এক-এক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে। আমি দেখতে পাচ্ছি আল্লার দূতেরা এক-এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তখন সমস্ত হিসােব উলটা করে দিয়ে যায়। ইন্দ্ৰকুমার। শয়তানও কি রাজধারকে জিতিয়ে দিতে পারে! ইশা খা । একবার তো জিতিয়েছিল সেই অস্ত্রপরীক্ষার সময়- এবারও সেই শয়তান জিতিয়েছে। যুবরাজ। সেনাপতি সাহেব, তুমি রাজধরের উপর রাগ কোরো না। সে যদি জিতে থাকে তাতে তো আমাদেরই জিত। কখন সে যুদ্ধ করলে, কখন বা বন্দী করলে, আমরা তো জানতে পারি নি। ইশা খা। কাল সন্ধ্যার পরে আমরা যখন যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়ে শিবিরে ফিরে এলেম তখন সে অন্ধকারে গোপনে নদী পার হয়ে হঠাৎ আরাকান-রাজের শিবির আক্রমণ করে তঁাকে বন্দী করেছে। আমাদের সাহায্য করবার জন্যে আমি তাকে যেখানে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলুম। সেখানে সে ছিলইনা । আমি সেনাপতি, আমার আদেশ সে মান্যই করে নি । ইন্দ্ৰকুমার। অসহ্য ! এজন্যে তার শাস্তি পাওয়া উচিত। ইশা খা। শুধু তাই! যুবরাজ উপস্থিত থাকতে সে কিনা নিজের ইচ্ছামত সন্ধিপত্র রচনা করেছে! ইন্দ্ৰকুমার। এর শাস্তি না দিলে অন্যায় হবে। ইশা খা । তোমার দাদাকে এই সহজ কথাটি বুঝিয়ে দাও দেখি। । ইন্দ্ৰকুমার। রাজধর ! তুমি কাপুরুষতা প্রকাশ করেছ। রাজধর । তোমার মতো যুদ্ধে ভঙ্গ দিয়ে পুরুষকার প্রকাশ করতে আমি এত দূরে আসিনি-আমি যুদ্ধ জয় করতে এসেছিলুম। : । । ইন্দ্ৰকুমার। তুমি যুদ্ধ করেছ ? এবং জয় করেছ! জয়লক্ষ্মীর মুখ যে লজ্জয় লাল করে তুলেছ!