পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা প্রতিক্ষণে ।। ঘনগুলুগন্ধপঞ্জীকৃত বায়ুশ গ্য বানতলে তরুকাণ্ডগুলি । চারি দিকে আকাবাক নানা শাখা তুলি অন্ধকারে ধরিয়াছে অসংখ্যা আকার বিকৃত বিরূপ । রুদ্ধ হল চারি ধার । নিস্তব্ধনিষেধসম প্রসারিল কর লতাশঙ্খলিত বন । শ্রান্তকলেবর পথিক বসিল ভুমে ; কে তার পশ্চাতে দাড়াইল উপচ্ছায়াসম ! সাথে সাথে অন্ধকারে পদে পদে তারে অনুসরি আসিয়াছে দীর্ঘ পথ মেনী অনুচরা রক্তসিক্তপদে | দুই মুষ্টি বদ্ধ করে গৰ্জিল পথিক, ‘তবু ছাড়িবি না মোরে ? রমণী বিদ্যুৎ বেগে ছুটিয়া পড়িয়া বন্যার তরঙ্গ-সম দিল আবরিয়া আলিঙ্গনে কেশপাশে স্রস্তবেশবাসে আত্রাণে চুঙ্গনে স্পশে সঘন নিশ্বাসে সর্ব অঙ্গ তাঁর ; আদ্রগদগদ বচন। কণ্ঠরুদ্ধপ্রায় ‘ছাড়িব না। ছাড়িব না। কহে বারম্বার— ‘ তোমা লাগি পপ, নাথ, তুমি শাস্তি দাও মোরে, করে মর্মঘাত, শেষ করে দাও মোর দণ্ড পরিস্কার । অরণ্যের গ্রহীতারহীন অন্ধকার অন্ধভাবে কী যেন করিলা তানভিব বিভীষিকা ; লক্ষ লক্ষ তরুমাল সর্ব মাটির ভিতরে থাকি শিহরিলা এসে । ব্যারেক ধ্বনিল রুদ্ধ নিষ্পেষিত শ্বাসে অন্তিম কাকৃতিস্বর, তারি পরীক্ষণে কে পড়িল ভূমি-"পরে অসাড় পতনে । বজাসেন বন হতে ফিরিলা যখন, প্রথম উষার করে বিদ্যুৎবরন মন্দিরত্রিশূলচুড়া জাহ্নবীর পারে । জনহীন বালুতটে নদীধারে-ধারে কাটাইল দীর্ঘ দিন ক্ষিপ্তের মতন উদাসীন | মধ্যাহের জুলন্ত তপন হানিল সর্বাঙ্গে তার অগ্নিময়ী কশ । ঘটকক্ষে গ্রামবধু হেরি তার দশ কহিল করুণকণ্ঠে, ‘কে গো গৃহছাড়া, এসো আমাদের ঘরে ।” দিল না সে সাড়া S. S.