পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ 8Sዔ বালক-বয়সে জগমোহনের বিবাহ হইয়াছিল। যৌবনকালে যখন তার স্ত্রী মারা যান তার পূর্বেই তিনি ম্যালথাস পড়িয়ছিলেন ; আর বিবাহ করেন নাই। ষ্ঠার ছোটাে ভাই হরিমোহন ছিলেন শচীশের পিতা। তিনি তার বড়ো ভাইয়ের এমনি উলটা প্রকৃতির যে, সে কথা লিখিতে গেলে গল্প সাজানো বলিয়া লোকে সন্দেহ করবে। কিন্তু গল্পই লোকের বিশ্বাস কড়িবার জন্য সাবধান হইয়া চলে, সত্যের সে দায় নাই বলিয়া সত্য অদ্ভুত হইতে ভয় করে না। তাই, সকাল এবং বিকাল যেমন বিপরীত, সংসারের বড়ো ভাই এবং ছােটাে ভাই তেমনি दिीठ- अभन पूँछेख्न्न अऊद नाश् । হরিমোহন শিশুকালে অসুস্থ ছিলেন। তাগাতাবিজ, শান্তি-স্বস্ত্যয়ন, সন্ন্যাসীর জটা-নিংড়ানো জল, বিশেষ বিশেষ পীঠস্থানের ধুলা, অনেক জাগ্ৰত ঠাকুরের প্রসাদ ও চরণামৃত, গুরু-পুরোহিতের অনেক টাকার আশীর্বাদে তাকে যেন সকল অকল্যাণ হইতে গড়বন্দী করিয়া রাখা হইয়াছিল। " বড়ো বয়সে তার আর ব্যামো ছিল না, কিন্তু তিনি যে বড়োই কাহিল, সংসার হইতে এ সংস্কার ঘুচিল না। কোনোক্রমে তিনি বীচিয়া থাকুন, এর বেশি তীর কাছে কেহ কিছু দাবি করিত না। তিনিও এ সম্বন্ধে কাহাকেও নিরাশ করিলেন না, দিব্য বঁচিয়া রহিলেন । কিন্তু শরীরটা যেন গোল-গোল এই ভাব করিয়া সকলকে শাসাইয়া রাখিলেন। বিশেষত র্তার পিতার অল্প বয়সে মৃত্যুর নজিরের জোরে মা-মাসির সমস্ত সেবায়ত্ব তিনি নিজের দিকে টানিয়া লইলেন। সকলের আগে তার আহার, সকলের হইতে তার আহারের আয়োজন স্বতন্ত্র, সকলের চেয়ে তীর কাজ কম, সকলের চেয়ে তার বিশ্রাম বেশি। কেবল মা-মসির নয়, তিনি যে তিন-ভুবনের সমস্ত ঠাকুর-দেবতার বিশেষ জিন্মায় এ তিনি । কখনাে ভুলিতেন না। কেবল ঠাকুর-দেবতা নয়, সংসারে যেখানে যার কাছে যে পরিমাণে সুবিধা পাওয়া যায়। তাকে তিনি সেই পরিমাণেই মানিয়া চলিতেন ; থানার দারোগ, ধনী প্রতিবেশী, উচ্চপদের রাজপুরুষ, খবরের কাগজের সম্পাদক, সকলকেই যথোচিত ভয়ভক্তি করিতেন— গো-ব্ৰাহ্মণের তো कशो ना । জগমোহনের ভয় ছিল উলটা দিকে। কারও কাছে তিনি লেশমাত্র সুবিধা প্রত্যাশা করেন এমন সন্দেহমাত্র পাছে কারও মনে আসে, এই ভয়ে ক্ষমতাশালী লোকদিগকে তিনি দূরে রাখিয়া চলিতেন। তিনি যে দেবতা মানিতেন না, তার মধ্যেও তার ঐ ভাবটা ছিল। লৌকিক বা অলৌকিক কোনো শক্তির কাছে তিনি হাতজোড় করিতে নারাজ । যথাকলে, অর্থাৎ যথাকালের অনেক পূর্বে, হরিমোহনের বিবাহ হইয়া গেল। তিন মেয়ে, তিন ছেলের পরে শচীশের জন্ম। সকলেই বলিল, জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে শচীশের চেহারার আশ্চর্য মিল । জগমোহনও তাকে এমনি করিয়া অধিকার করিয়া বসিলেন যেন সে তারই ছেলে। ইহাতে যেটুকু লাভ ছিল হরিমোহন প্রথমটা সেইটুকুর হিসাব খাতাইয়া খুশি ছিলেন। কেননা, জগমোহন নিজে শচীশের শিক্ষার ভার লইয়াছিলেন। ইংরেজি-ভাষায় অসামান্য ওস্তাদ বলিয়া জগমোহনের খ্যাতি। কাহারও মতে তিনি বাংলার মেকলে, কাহারও মতে বাংলার জনসন। শামুকের খোলার মতো তিনি যেন ইংরেজি বই দিয়া ঘেরা। নুড়ির রেখা ধরিয়া পাহাড়ে-ঝর্নার পথ যেমন চেনা যায় তেমনি বাড়ির মধ্যে কোন কোন অংশে তার চলাফেরা তাহা মেজে হইতে কড়ি পর্যন্ত ইংরেজি বইয়ের বোঝা দেখিলেই বুঝা যাইত। 影 হরিমোহন তীর বড়ো ছেলে পুরন্দরকে স্নেহের রসে একেবারে গলাইয়া দিয়াছেন। সে যাহা চাহিত তাহাতে তিনি না করিতে পারিতেন না। তার জন্য সর্বদাই তার চােখে যেন জল ছলছল করিত। তার মনে হইত, কোনাে কিছুতে বাধা দিলে সে যেন বঁচিবে না। পড়াশুনা কিছু তার হইলই না, সকাল সকাল বিবাহ হইয়া গেল এবং সেই বিবাহের চতুঃসীমানার মধ্যে কেহই তাঁহাকে ধরিয়া রাখিতে পারিল । না। হরিমোহনের পুত্রবধুইহাতে উদ্যমের সহিত আপত্তি প্রকাশ করিত এবং হরিমোহন র্তার পুত্রবধুর সুগ্ৰন্থ রগরিয়ার্কন্সে আর তার উপরেই ঠার চেলেৰে বহির সাক্ষর পথ খুঁজতে