পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&br । ब्रौक्ष-प्रश्नावजैी এই সকল কাণ্ড দেখিয়াই পিতৃস্নেহের বিষম বিপত্তি হইতে শচীশকে বীচাইবার জন্য জগমোহন তাহাকে নিজের কােছ হইতে একটুও ছাড়া দিলেন না। শচীশ দেখিতে দেখিতে অল্প বয়সেই ইংরেজি লেখায় পড়ায় পাকা হইয়া উঠিল। কিন্তু সেইখানেই তো থামিল না। তার মগজের মধ্যে মিল-বেস্থামের অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়া সে যেন নাস্তিকতার মশালের মতো জ্বলিতে লাগিল । জগমোহন শচীশের সঙ্গে এমন চালে চলিতেন যেন সে তার সমবয়সী। গুরুজনকে ভক্তি করাটা তঁর মতে একটা ঝুটা সংস্কার ; ইহাতে মানুষের মনকে গোলামিতে পাকা করিয়া দেয়। বাড়ির কোনাে-এক নূতন জামাই তাকে ‘শ্ৰীচরণেষু পাঠ দিয়া চিঠি লিখিয়াছিল। তাহাকে তিনি নিম্নলিখিত প্ৰণালীতে উপদেশ দিয়াছিলেন : মাইডিয়ার নরেন, চরণকে শ্ৰী বলিলে যে কী বলা হয় তা আমিও জানি না, তুমিও জান না, অতএব ওটা বাজে কথা ; তার পরে, আমাকে একেবারে বাদ দিয়া আমার চরণে তুমি কিছু নিবেদন করিয়াছ, তোমার জানা উচিত আমার চরণটা আমারই এক অংশ, যতক্ষণ ওটা আমার সঙ্গে লাগিয়া আছে ততক্ষণ উহাকে তফাত করিয়া দেখা উচিত না ; তার পরে, ঐ অংশটা হাতও নয়, কানও নয়, ওখানে কিছু নিবেদন করা পাগলামি ; তার পরে শেষ কথা এই যে আমার চরণসম্বন্ধে বহুবচন প্রয়োগ করিলে ভক্তিপ্রকাশ করা হইতে পারে, কারণ কোনো কোনো চতুষ্পদ তোমাদের ভক্তিভাজন, কিন্তু ইহাতে আমার প্রাণিতত্ত্বঘটিত পরিচয়-সম্বন্ধে তোমার অজ্ঞতা সংশোধন করিয়া দেওয়া আমি উচিত মনে করি । এমন-সকল বিষয়ে শচীশের সঙ্গে জগমোহন আলোচনা করিতেন যাহা লোকে সচরাচর চাপা দিয়া থাকে। এই লইয়া কেহ আপত্তি করিলে তিনি বলিতেন, বোলতার বাসা ভাঙিয়া দিলেই তবে বোলতা তাড়ানো যায়, তেমনি এ সব কথায় লজ্জা করাটা ভাঙিয়া দিলেই লজ্জার কারণটাকে খেদানো হয় ; শচীশের মন হইতে আমি লজ্জার বাসা ভাঙিয়া দিতেছি। \O লেখাপড়া-শেখা। সারা হইল। এখন হরমােহন শচীশকে তার জ্যাঠার হাত হইতে উদ্ধার করিবার জন্য উঠিয়া-পড়িয়া লাগিলেন। কিন্তু বড়শি তখন গলায় বাধিয়াছে, বিধিয়াছে; তাই এক পক্ষের টান যতই বাড়িল অপর পক্ষের বাঁধনও ততই আঁটিল। ইহাতে হরিমোহন ছেলের চেয়ে দাদার উপরে বেশি রাগ করিতে লাগিলেন ; দাদার সম্বন্ধে রঙ-বেরঙের নিন্দায় পাড়া ছাইয়া দিলেন। শুধু যদি মত-বিশ্বাসের কথা হইত হরিমােহন আপত্তি করিতেন না ; মুৰ্গ খাইয়া লোকসমাজে সেটাকে পীঠ বলিয়া পরিচয় দিলেও তিনি সহা করিতেন। কিন্তু ইহারা এত দূর গিয়াছিলেন যে, মিথ্যার সাহায্যেও ইহাদিগকে ত্ৰাণ করিবার উপায় ছিল না। যেটাতে সব চেয়ে বাধিল সেটা বলি: জগমোহনের নাস্তিকধর্মের একটা প্রধান অঙ্গ ছিল লোকের ভালো করা। সেই ভালো-করার মধ্যে অন্য যে-কোনাে রস থাক একটা প্রধান রস এই ছিল যে, নাস্তিকের পক্ষে লোকের ভালো করার মধ্যে নিছক নিজের লোকসান ছাড়া আর কিছুইনাই- তাহাতে না আছে পুণ্যনা আছে। পুরস্কার, না আছে কোনাে দেবতা বা শাস্ত্রের বকশিশের বিজ্ঞাপন বা চােখ রাঙানি। যদি কেহ তঁহাকে জিজ্ঞাসা করিত ‘প্রচুরতম লোকের প্রভুততম সুখসাধনে আপনার গরজটা কী তিনি বলিতেন, কোনাে গরজ নাই, সেইটেই আমার সব চেয়ে বড়ো গরজ। তিনি শচীশকে বলিতেন, দেখ বাবা, আমরা নাস্তিক, সেই গুমরেই আমাদিগকে একেবারে নিষ্কলঙ্ক নির্মল হইতে হইবে। আমরা কিছুকে মানি না বলিয়াই আমাদের নিজেকে মানিবার জোর বেশি। ছিল তার শচীশ ‘প্রচুরতম লোকের প্রভুততম সুখসাধনের প্রধান চেলা । १ोgाश फ्रांभgi গোটাকয়েক বড়ো আড়ত। সেখানকার যত মুসলমান ব্যাপারী এবং চামারদের লইয়া জ্যাঠায় ভাইপোয় মিলিয়া এমনি ঘনিষ্ঠ-রকমের হিতানুষ্ঠানে লাগিয়া গেলেন যে, হরিমোহনের ফোঁটাতিলক আগুনের শিখার মতো জ্বলিয়া তার মগজের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটাইবার জো করিল। দাদার কাছে শাস্ত্র