পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Ou তুষায় ফাটিল ছাতি, তবু সম্পর্শিল সম্মুখের নদী হতে জল এক কণা | দিন শেষে জরতপ্ত দগ্ধ কলেবারে ছুটিয়া পশিল গিয়া তরণীর পরে, পতঙ্গ যেমন বেগে অগ্নি দেখে ধায় উগ্র আগ্রহের ভরে । হেরিলা শয্যায় একটি নুপুর আছে পড়ি, শতবার রাখিল বক্ষেতে চাপি- ঝংকার তাহার শতমুখ শরসম লাগিল বর্ষিতে হৃদয়ের মাঝে | ছিল পড়ি এক ভিতে নীলাম্বর বস্তুখানি, রাশীকৃত করি তারি পরে মুখ রাখি রহিল সে পড়িসুকুমার দেহগন্ধ নিশ্বাসে নিঃশেষে লাইল শোষণ করি অতৃপ্ত আবেশে । শুক্ল পঞ্চমীর শশী অস্তাচলগাম৷ সপ্তপর্ণতরুশিরে পড়িয়াছে নামি শাখা-আন্তরালে । দুই বাহু প্রসারিয়া ডাকিতেছে বজাসেন ‘এসো এসে প্রিয়া চাহি অরণ্যের পানে | হেনকালে তীরে বালুতটে ঘনকৃষ্ণ বনের তিমিরে কার মূর্তি দেখা দিল উপচ্ছায়াসম । ‘এসো এসে প্ৰিয়া !’ ‘আসিয়াছি প্ৰিয়তমা ?” চরণে পড়িল শ্যামা, “ক্ষম মোরে ক্ষম ! গেল না তো সুকঠিন এ পরান মম। তোমার করুণ করে !! শুধু ক্ষণতরে বজাসেন তাকাইল তার মুখ-’পরে, ক্ষণতরে আলিঙ্গন লাগি বাহু মেলি চমকি উঠিল, তারে দূরে দিল ঠেলি— গরাজিল, “কেন এলি, কেন ফিরে এলি !" বক্ষ হতে নুপুর লইয়া দিল ফেলি, জুলন্ত-অঙ্গার-সম নীলাম্বরখানি চরণের কাছ হতে ফেলে দিল টানি ; লাগিল দহিতে তারে । মুদি দুই আঁখি কহিল ফিরায়ে মুখ, “যাও যাও ফিরে, মোরে ছেড়ে চলে যাও !” নারী নতশিরে ক্ষণতরে রহিল নীরবে । পরীক্ষণে ভূতলে রাখিয়া জানু যুবার চরণে প্ৰণমিল, তার পরে নামি নদীতীরে আঁধার বনের পথে চলি গৈল ধীরে,