পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 রবীন্দ্র-রচনাবলী । সে কলিকাতায় কলেজে পড়ে, আর কয়েক মাস পরে পরীক্ষা দিয়া আগামী আষাঢ় মাসে সে বিবাহ করিবে এইরকম কথা । এমন সময়ে নবীনের স্ত্রীর কাছে ধরা পড়িল যে তার স্বামীর ও তার বোনের পরস্পর আসক্তি জন্মিয়াছে। তখন তার বােনকে বিবাহ করিবার জন্য সে স্বামীকে অনুরোধ করিল। খুব বেশি পীড়াপীড়ি করিতে হইল না। বিবাহ চুকিয়া গেলে পর নবীনের প্রথম স্ত্রী বিষ খাইয়া আত্মহত্যা করিয়াছে। Ա তখন আর কিছু করিবার ছিল না। আমরা ফিরিয়া আসিলাম। গুরুজির কাছে অনেক শিষ্য জুটিল, তারা তাকে কীর্তন শুনাইতে লাগিল— তিনি কীর্তনে যোগ দিয়া নাচিতে লাগিলেন। প্রথম রাত্রে তখন চাদ উঠিয়াছে। ছাদের যে কোণটার দিকে একটা চালতা গাছ ঝুকিয়া পড়িয়াছে সেইখানটার ছায়া-আলোর সংগমে দামিনী চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। শচীশ তার পিছন দিকের ঢাকা বারান্দার উপরে আস্তে আস্তে পায়চারি করিতেছে। আমার ডায়ারি লেখা রোগ, ঘরের মধ্যে একলা বসিয়া লিখিতেছি। সেদিন কোকিলের আর ঘুম ছিল না। দক্ষিনে হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো যেন কথা বলিয়া উঠিতে চায়, আর তার উপরে চাঁদের আলো ঝিলমিল করিয়া উঠে। হঠাৎ এক সময়ে শচীশের কী মনে হইল, সে দামিনীর পিছনে আসিয়া দাড়াইল। দামিনী চমকিয়া মাথায় কাপড় দিয়া একেবারে উঠিয়া দাড়াইয়া চলিয়া যাইবার উপক্ৰম করিল। শচীশ ডাকিল, দামিনী ! দামিনী থমকিয়া দাড়াইল। জোড়হাত করিয়া কহিল, প্ৰভু, আমার একটা কথা শোনাে। শচীশ চুপ করিয়া তার মুখের দিকে চাহিল। দামিনী কহিল, আমাকে বুঝাইয়া দাও, তোমরা দিনরাত যা লইয়া আছ, তাহাতে পৃথিবীর কী প্রয়োজন ? তোমরা কাকে বীচাইতে পারিলে ? আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া বারান্দায় আসিয়া দাড়াইলাম। দামিনী কহিল, তোমরা দিনরাত রস রস করিতেছ, ও ছাড়া আর কথা নাই। রস যে কী সে তো আজ দেখিলে ? তার না আছে ধর্ম, না আছে কর্ম না আছে ভাই, না আছে স্ত্রী, না আছে কুলমান ; তার দয়া নাই, বিশ্বাস নাই, লজ্জা নাই, শরম নাই। এই নির্লজ্জ নিষ্ঠুর সর্বনেশে রসের রসাতল হইতে মানুষকে রক্ষা করিবার কী উপায় তোমরা করিয়াছ ? w আমি থাকিতে পারিলাম না ; বলিয়া উঠিলাম, আমরা স্ত্রীলােককে আমাদের চতুঃসীমানা দূরে খেদাইয়া রাখিয়া নিরাপদে রসের চর্চা করিবার ফন্দি করিয়াছি। আমার কথায় একেবারেই কান না দিয়া দামিনী শচীশকে কহিল, আমি তোমার গুরুর কাছ হইতে কিছুই পাই নাই। তিনি আমার উতলা মনকে এক মুহুর্ত শান্ত করিতে পারেন নাই। আগুন দিয়া আগুন নেবানো যায় না । তোমার গুরু যে-পথে সবাইকে চালাইতেছেন সে-পথে ধৈর্য নাই, বীর্য নাই, শান্তি নাই। ঐ যে মেয়েটা মরিল, রসের পথে রসের রাক্ষসীই তো তার বুকের রক্ত খাইয়া তাকে মারিল। কী তার কুৎসিত চেহারা সে তো দেখিলে! প্ৰভু, জোড়হাত করিয়া বলি, ঐ রাক্ষসীর কাছে আমাকে বলি দিয়ে না। আমাকে বীচাও। যদি কেউ আমাকে বঁাচাইতে পারে তো সে তুমি । ক্ষণকালের জন্য আমরা তিন জনেই চুপ করিয়া রহিলাম। চারি দিক এমনি স্তব্ধ হইয়া উঠিল যে আমার মনে হইল, যেন ঝিল্লির শব্দে পাণ্ডুবৰ্ণ আকাশটার সমস্ত গা বিমঝিম করিয়া আসিতেছে। শচীশ বলিল, বলে আমি তোমার কী করিতে পারি। দামিনী বলিল, তুমিই আমার গুরু হও। আমি আর কাহাকেও মানিব না। তুমি আমাকে এমন কিছু মন্ত্র দাও যা এ-সমস্তের চেয়ে অনেক উপরের জিনিস-যাহাতে আমি বঁচিয়া যাইতে পারি। আমার দেবতাকেও তুমি আমার সঙ্গে মজাইয়ে না। 弼 শচীশ স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া কহিল, তাই হইবে। দামিনী শচীশের পায়ের কাছে মাটিতে মাথা ঠেকাইয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া প্ৰণাম করিল। গুনগুন করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি আমার গুরু, তুমি আমার গুরু ! আমাকে সকল অপরাধ হইতে বীচাও, दैाष्3, दै53 |