পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

82ty রবীন্দ্র-রচনাবলী লোককে দুঃখ হইতে ধাচাইবার জন্য আর-এক দলকে দুঃখ পাইতে হইবে। এই দুই জাতের মানুষ লইয়া সংসার। আমি যে কােন জাতের দামিনী তাহাবুবিয়া লইয়াছে। যাক, দলে টানিল এই আমার সুখ। । শচীশকে গিয়া বলিলাম, বেশ তো, শহরে এখনই নাই গেলাম। নদীর ধারে ঐ যে পোড়ো বাড়ি আছে ওখানে কিছুদিন কাটানো যাক। বাড়িটাতে ভূতের উৎপাত আছে বলিয়া গুজব, অতএব মানুষের উৎপাত ঘটবে না। 4 শচীশ বলিল, আর তোমরা ? - আমি বলিলাম, আমরা ভূতের মতোই যতটা পারি গা-ঢাকা দিয়া থাকিব। শচীশ দামিনীর মুখের দিকে একবার চাহিল। সে চাহনিতে হয়তো একটু ভয় ছিল। দামিনী হাত জোড় করিয়া বলিল, তুমি আমার গুরু । আমি যত পাপিষ্ঠ হই আমাকে সেবা করিবার অধিকার দিয়ে। g যাই বল, আমি শচীশের এই সাধনার ব্যাকুলতা বুঝিতে পারি না। একদিন তো এ জিনিসটাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছি, এখন আর যাই হােক হাসি বন্ধ হইয়া গেছে। আলেয়ার আলো নয়, এ যে আগুন। শচীশের মধ্যে ইহার দহটা যখন দেখিলাম তখন ইহাকে লইয়া জ্যাঠামশায়ের চেলাগিরি করিতে আর সাহস হইল না। কোন ভূতের বিশ্বাসে ইহার আদি এবং কোন অদ্ভুতের বিশ্বাসে ইহার অন্ত তাহা লইয়া হার্বাির্ট স্পেন্সরের সঙ্গে মোকাবিলা করিয়া কী হইবে- স্পষ্ট দেখিতেছি। শচীশ জ্বলিতেছে, তার জীবনটা এক দিক হইতে আর-এক দিক পর্যন্ত রাঙা হইয়া উঠিল। এতদিন সে নাচিয়া গাহিয়া কঁদিয়া গুরুর সেবা করিয়া দিনরাত অস্থির ছিল, সে একরকম ছিল ভালো। মনের সমস্ত চেষ্টা প্রত্যেক মুহূর্তে ফুকিয়া দিয়া একেবারে সে নিজেকে দেউলে করিয়া দিত। এখন স্থির হইয়া বসিয়াছে, মনটাকে আর চাপিয়া রাখিবার জো নাই। আর ভাবসম্ভোগে তলাইয়া যাওয়া নয়, এখন উপলব্ধিতে প্রতিষ্ঠিত হইবার জন্য ভিতরে ভিতরে এমন লড়াই চলিতেছে যে তার भूश (शिल उश श्श | আমি একদিন আর থাকিতে পারিলাম না ; বলিলাম, দেখো শচীশ, আমার বোধ হয় তোমার একজন কোনো গুরুর দরকার, যার উপরে ভর করিয়া তোমার সাধনা সহজ হইবে। শচীশ বিরক্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, চুপ করো বিশ্ৰী, চুপ করে—সহজকে কিসের দরকার ? ফার্কিই সহজ, সত্য কঠিন । আমি ভয়ে ভয়ে বলিলাম, সত্যকে পাইবার জন্যই তো পথ দেখাইবারশচীশ অধীর হইয়া বলিল, ওগো, এ তোমার ভূগোলবিবরণের সত্য নয়, আমার অন্তর্যামী কেবল আমার পথ দিয়াই আনাগোনা করেন- গুরুর পথ গুরুর আঙিনাতেই যাওয়ার পথ । এই এক শচীশের মুখ দিয়া কতবার যে কত উলটা কথাই শোনা গেল ! আমি শ্ৰীবিলাস, জ্যাঠামশায়ের চেলা বটে, কিন্তু তাকে গুরু বলিলে তিনি আমাকে চেলাকািঠ লইয়া মারিতে আসিতেন। সেই আমাকে দিয়া শচীশ গুরুর পা টিপাইয়া লইল, আবার দুদিন না। যাইতেই সেই আমাকেই এই বক্তৃতা! আমার হাসিতে সাহস হইল না, গভীর হইয়া রহিলাম। শচীশ বলিল, আজ আমি স্পষ্ট বুঝিয়াছি, স্বধর্মেনিধনং শ্ৰেয়ঃ পরীধর্মে ভয়াবহঃ কথাটার অর্থকী। আর-সব জিনিস পরের হাত হইতে লওয়া যায়, কিন্তু ধর্ম যদি নিজের না হয় তবে তাহা মারে, বীচায় না। আমার ভগবান অন্যের হাতের মুষ্টিভিক্ষা নহেন ; যদি তাকে পাই তো আমিই র্ত্যকে পাইব, नाशिन्न निक्षन्नं (र्धशः । তর্ক করা আমার স্বভাব, আমি সহজে ছাড়িবার পাত্র নই ; আমি বলিলাম, যে কবি সে মনের