পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে r 1 - 8ᏑᏬ B DD LDBB DBBBD SS BDD DBDB DBB DOB DDD S শুধু তাই নয়, আমার সব চেয়ে বুকে বিধেছিল যে, আমাকে হার মানতে হয়েছে। আমার তেজ কেবল আমাকেই দগ্ধ করলে, কিন্তু আমার স্বামীকে উজ্জ্বল করলে না। এই তো আমার সতীত্বের অপমান । অথচ স্বদেশী কণ্ডর সঙ্গে যে আমার স্বামীর যোগ ছিল না বা তিনি এর বিরুদ্ধ ছিলেন তা নয় । কিন্তু "বন্দে মাতরম মন্ত্রটি তিনি চূড়ান্ত করে গ্রহণ করতে পারেন নি। তিনি বলতেন, দেশকে আমি সেবা করতে রাজি আছি, কিন্তু বন্দনা করব র্যাকে তিনি ওর চেয়ে অনেক উপরে। দেশকে যদি বন্দনা করি। তবে দেশের সর্বনাশ করা হবে। 鲁 এমন সময়ে সন্দীপবাবু স্বদেশী প্রচার করবার জন্যে র্তার দলবল নিয়ে আমাদের ওখানে এসে উপস্থিত হলেন । বিকেলবেলায় আমাদের নাটমন্দিরে সভা হবে । আমরা মেয়েরা দালানের এক দিকে চিক ফেলে বসে আছি। বন্দে মাতরম" শব্দের সিংহনাদ ক্রমে ক্ৰমে কাছে আসছে, আমার বুকের ভিতরটা গুর গুরু করে কেঁপে উঠছে। হঠাৎ পাগড়ি-বাধা গেরুয়া-পরা যুবক ও বালকের দল খালি পায়ে আমাদের প্রকাণ্ড আঙিনার মধ্যে, মরা নদীতে প্রথম বর্ষার গেরুয়া বন্যার ধারার মতো, হুড় হুড় করে ঢুকে পড়ল। লোকে লোকে ভরে গেল। সেই ভিড়ের মধ্যে দিয়ে একটা বড়ো চৌকির উপর বসিয়ে দশ-বারো জন ছেলে সন্দীপবাবুকে কঁধে করে নিয়ে এল। বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম! আকাশটা যেন ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে ছিড়ে পড়বে মনে হল। সদীপবাবুর ফোটােগ্রাফ পূর্বেই দেখেছিলুম। তখন যে ঠিক ভালো লেগেছিল তা বলতে পারি নে। কুগ্ৰী দেখতে নয়, এমনকি, রীতিমত সুশ্ৰীই। তবু জানি না কেন আমার মনে হয়েছিল উজ্জ্বলতা আছে বটে, কিন্তু চেহারাটা অনেকখানি খাদে মিশিয়ে গড়া- চােখে আর ঠোঁটে কী-একটা আছে যেটা খাটি নয়। সেইজন্যেই আমার স্বামী যখন বিনা দ্বিধায় তীর সকল দাবি পূরণ করতেন আমার ভালো লগত না। অপব্যয় আমি সইতে পারতুম, কিন্তু আমার কেবলই মনে হত বন্ধু হয়ে এ লোকটা আমার স্বামীকে ঠকাচ্ছে। কেননা, ভাবখানা তো তপস্বীর মতো নয়, গব্লিবের মতোও নয়, দিব্যি বাবুর মতো। ভিতরে আরামের লোভ আছে, অথচ- এইরকম নানা কথা আমার মনে উদয় হয়েছিল। আজ সেই সব কথা মনে উঠছে- কিন্তু থাক । কিন্তু, সেদিন সন্দীপবাবু যখন বক্তৃতা দিতে লাগলেন আর এই বৃহৎ সভার হৃদয় দুলে দুলে ফুলে ফুলে উঠে কুল ছাপিয়ে ভেসে যাবার জো হল তখন তার সে এক আশ্চর্য মূর্তি দেখলুম। বিশেষত এক সময় সূর্য ক্রমে নেমে এসে ছাদের নীচে দিয়ে তীর মুখের উপর যখন হঠাৎ রৌদ্র ছড়িয়ে দিলে তখন মনে হল, তিনি যে অমর-লোকের মানুষ এই কথাটা দেবতা সেদিন সমস্ত নরনারীর সামনে প্রকাশ করে দিলেন। বক্তৃতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক কথায় যেন ঝড়ের দমকা হাওয়া। সাহসের অন্ত নেই। আমার চােখের সামনে যেটুকু চিকের আড়াল ছিল সে আমি সইতে পারছিলুম না। কখন নিজের অগোচরে চিক খানিকটা সরিয়ে ফেলে মুখ বের করে তার মুখের দিকে চেয়েছিলুম আমার মনে পড়ে না। সমস্ত সভায় এমন একটি লোক ছিল না। আমার মুখ দেখবার যার একটু অবকাশ ছিল। কেবল এক সময় দেখলুম কালপুরুষের নক্ষত্রের মতো সন্দীপবাবুর উজ্জ্বল দুই চোখ আমার মুখের উপর এসে পড়ল। কিন্তু আমার ছশ ছিল না। আমি কি তখন রাজবাড়ির বউ ? আমি তখন বাংলাদেশের সমস্ত নারীর একমাত্র প্রতিনিধি। আর তিনি বাংলাদেশের বীর। যেমন আকাশের সূর্যের আলো তার ঐ ললাটের উপর পড়েছে, তেমনি দেশের নারীচিত্তের অভিষেক যে চাই। নইলে তীর রণযাত্রার মঙ্গল্য পূর্ণ হবে কী করে ? আমি স্পষ্টই অনুভব করতে পারলুম, আমার মুখের দিকে চাওয়ার পর থেকে তঁর ভাষার আগুন আরো জ্বলে উঠল। ইন্দ্রের উচ্চৈঃশ্ৰবা৷ তখন আর রাশমানতে চাইল না- বজের উপর বজের গর্জন, বিদ্যুতের উপর বিদ্যুতের চমকানি। আমার মন বললে, আমারই চােখের শিখায় এই আগুন ধরিয়ে