পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 tr ব্ৰাহ্মণ যত নগরে আছিল উঠিল বিষম রাগি— লোক নাহি ধরে যবন জেলার চরণাধুলার লাগি । চারি পোওয়া কলি পুরিয়া আসিল পাপের বোঝায় ভরা, এর প্রতিকার না করিলে আর রক্ষা না পায় ধরা । ব্ৰাহ্মণদল যুক্তি করিল নষ্ট নারীর সাথে— · গোপনে তাহারে মন্ত্রণা দিল, কাঞ্চন দিল হাতে । বসন বেচিতে এসেছে কবীর একদা হাটের বারে, সহসা কামিনী সবার সামনে কাদিয়া ধরিল তারে । কহিল, ‘রে শঠ, নিঠর কপট, কহি নে কাহারও কাছে----- এমনি করে কি সরলা নারীরে ছলনা করিতে আছে ! বিনা অপরাধে আমারে তাজিয়া সাধু সাজিয়াছ ভালো, কাছে ছিল যত ব্ৰাহ্মণদল করিল। কপট কোপ, ‘ভণ্ডতাপস, ধর্মের নামে করিছ। ধর্মলোপ ! তুমি সুখে বসে ধুলা ছাড়াইছ সরল লোকের চোখে, অবলা আখলা পথে পথে আহা ফিরিছে অন্নশোকে !” কহিল কবীর, “অপরাধী। আমি, ঘরে এসো নারী। তবে— আমার অন্ন রহিতে কেন বা তুমি উপবাসী রবে ? দুষ্টা নারীরে আনি গৃহমাঝে বিনয়ে আদর করি কবীর কহিল, ‘দীনের ভবনে তোমারে পাঠালো হরি ।” কাদিয়া তখন কহিল রমণী লাজে ভয়ে পরিতাপে, লোভে পড়ে আমি করিয়াছি পাপ, মরিব সাধুর শাপে । কহিল কবীর, “ভয় নাই মাতঃ, লইব না। অপরাধ— এনেছ আমার মাথার ভূষণ অপমান অপবাদ ।” ঘুচাইল তার মনের বিকার, করিল চেতনা দান--- সঁপি দিল তার মধুর কণ্ঠে হরিনামগুণগান । রটি গেল দেশে— কপট কবীর, সাধুতা তাহার মিছে ৷ শুনিয়া কবীর কহে নতশির, “আমি সকলের নীচে । যদি কুল পাই তরণী-গরিব রাখিতে না চাহি কিছু— তুমি যদি থাক আমার উপরে আমি রব সাব-নিচু ।” রাজার চিত্তে কৌতুক হল শুনিতে সাধুর গাথা । দূত আসি তারে ডাকিল। যখন সাধু নাড়িলেন মাথা । কহিলেন, “থাকি সব হতে দূরে আপনি হীনতা-মাঝে ; আমার মতন অভাজন জন রাজার সভায় সাজে ।” দূত কহে, “তুমি না গেলে ঘটিবে আমাদের পরমাদ, যশ শুনে তব হয়েছে রাজার সাধু দেখিবার সাধ ।”