পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে । tidd সুপিায় যায়৷ থেকে থেকে আৰু ফিরে ঠিক পড়ে। এর আদি নে বেশিদূর ফিরে বিমল যে আমার কামনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সেজন্যে আমার কোনো মিথ্যে লজ্জা নেই। আমি যে স্পষ্ট দেখছি ও আমাকে চায়, ঐ তো আমার স্বকীয়া । গাছে ফল বেঁটায় ঝুলে আছে, সেই বেঁটার দাবিকেই চিরকালের বলে মানতে হবে নাকি ! ওর যত রস যত মাধুর্য সে যে আমার হাতে সম্পূর্ণ খসে পড়বার জন্যেই ; সেইখানেই একেবারে আপনাকে ছেড়ে দেওয়াই ওর সার্থকতা ; সেই ওর ধর্ম, ওর নীতি। আমি সেইখনেই ওকে পেড়ে আনব, ওকে ব্যর্থ হতে দেব না। কিন্তু আমার ভাবনা এই যে, আমি জড়িয়ে পড়ছি, মনে হচ্ছে আমার জীবনে বিমল বিষম একটা দায় হয়ে উঠবে। আমি পৃথিবীতে এসেছি কর্তৃত্ব করতে ; আমি লোককে চালনা করব কথায় এবং কাজে । সেই লোকের ভিড়ই আমার যুদ্ধের ঘোড়া। আমার আসন তার পিঠের উপরে, তার রাশ আমার হাতে, তার লক্ষ্য সে জানে না- শুধু আমিই জানি ; কঁাটায় তার পায়ে রক্ত পড়বে, কাদায় তার গা ভরে যাবে, তাকে বিচার করতে দেব না, তাকে ছোটব । সেই আমার ঘোড়া আজ দরজায় দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে খুর দিয়ে মাটি খুঁড়ছে, তার হ্রেষাধবনিতে সমস্ত আকাশ আজ কেঁপে উঠল, কিন্তু আমি করছি কী ? দিনের পর দিন আমার কী নিয়ে কাটছে ? ও দিকে আমার এমন শুভদিন যে বয়ে গেল ।

  • আমার ধারণা ছিল আমি ঝড়ের মতো ছুটে চলতে পারি ; ফুল ছিড়ে আমি মাটিতে ফেলে দিই কিন্তু তাতে আমার চলার ব্যাঘাত করে না । কিন্তু এবার যে আমি ফুলের চার দিকে ফিরে ফিরে ঘুরে

তাই তাে বলি, নিজের আইডিয়া দিয়ে নিজেকে যে রঙে আঁকি সব জায়গায় সে রঙ তাে পাকা হয়ে ধরে না, হঠাৎ দেখতে পাই সেই সামান্য মানুষটাকে । কোনো-এক অন্তর্যামী যদি আমার জীবনবৃত্তান্ত লিখতেন তা হলে নিশ্চয় দেখা যেত আমার সঙ্গে আর ঐ পাচুর সঙ্গে বেশি তফাত নেই- এমন-কি, ঐ নিখিলেশের সঙ্গে। কাল রাত্রে আমার আত্মকাহিনীর খাতাটা নিয়ে খুলে পড়ছিলুম। তখন সবে বি. এ. পাস করেছি, ফিলজফিতে মগজ ফেটে পড়ছে বললেই হয়। তখন থেকেই পণ করেছিলুম নিজের হাতে বা পরের হাতে গড়া কোনো মায়াকেই জীবনের মধ্যে স্থান দেব না, জীবনটাকে আগাগােড়া একেবারে নিরেট বাস্তব করে তুলব। কিন্তু তার পর থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত জীবনকাহিনীটাকে কী দেখছি ? কোথায় সেই ঠাস-বুনােনি ? এ যে জালের মতো ; সূত্র বরাবর চলেছে, কিন্তু সূত্র যতখানি ফাঁক তার চেয়ে বেশি বৈ কম নয়। এই ফাকটার সঙ্গে লড়াই করে করে একে সম্পূর্ণ হার মানানো গেল না। কিছুদিন বেশ একটু নিশ্চিন্ত হয়ে জোরের সঙ্গেই চলছিলুম, আজ দেখি। আবার একটা মস্ত ফাক । , আজ দেখি মনের মধ্যে ব্যথা লাগছে। “আমি চাই, হাতের কাছে এসেছে, ছিড়ে নেব- এ হল খুব স্পষ্ট কথা, খুব সংক্ষেপ রাস্তা। এই রাস্তায় যারা জোরের সঙ্গে চলতে পারে তারাই সিদ্ধিলাভ করে, , এই কথা আমি চিরদিন বলে আসছি। কিন্তু ইন্দ্ৰদেব এই তপস্যাকে সহজ করতে দিলেন না, তিনি কোথা থেকে বেদনার অন্সরীকে পাঠিয়ে দিয়ে সাধকের দৃষ্টিকে বাষ্পজালে অস্পষ্ট করে ( ।। দেখছি বিমলা জালে-পড়া হরিণীর মতো ছট্‌ফটু করছে ; তার বড়ো বড়ো দুই চোখে কত ভয় কত করুণা, জোর করে বঁাধন ছিড়তে গিয়ে তার দেহ ক্ষতবিক্ষত— ব্যাধ তো এই দেখে খুশি হয় । আমার সুস্থ কিন্তু কথাও আছে। সেইজন কােই দেরি হয় যােচ্ছ, তেল জােরে ফাঁস করতে 邪硕(F আমি জানি দুবার তিনবার এমন এক-একটা মুহুর্ত এসেছে যখন আমি ছুটে গিয়ে বিমলার হাত চেপে ধরে তাকে আমার বুকের উপর টেনে আনলে সে একটি কথা বলতে পারত না, সেও বুঝতে পারছিল এখনই একটা কী ঘটতে যাচ্ছে যার পর থেকে জগৎসংসারের সমস্ত তাৎপর্য একেবারে বদলে