পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏊᏔ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এম. এ. ক্লাসের ছাত্রটি ঈষৎ হেসে বললে, কারণ, তাতে আপনার লোকসান আছে | মাস্টারমশায় বললেন, হাঁ, তাতে ওঁর লোকসান আছে, সুতরাং সে উনিই বুঝবেন। তখন ছাত্রেরা সকলে উচ্চৈঃস্বরে ‘বন্দেমাতরং বলে চীৎকার করে বেরিয়ে গেল । এর কিছুদিন পরেই মাস্টারমশায় পঞ্চকে আমার কাছে নিয়ে এসে উপস্থিত। ব্যাপার কী ? ওদের জমিদার হরিশ কুণ্ডু পঞ্চকে এক-শো টাকা জরিমানা করেছে। কেন! ওর অপরাধ কী ? ? ও বিলিতি কাপড় বেচেছে ! ও জমিদারকে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে বললে, পরের কাছে ধার-করা টাকায় কাপড় কখানা কিনেছে, এইগুলো বিক্রি হয়ে গেলেই ও এমন কাজ আর কখনো করবে না । জমিদার বললে, সে হচ্ছে না, আমার সামনে কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেল, তবে ছাড়া পাবি। ও থাকতে না পেরে হঠাৎ বলে ফেললে, আমার তো সে সামর্থ্য নেই, আমি গরিব ; আপনার যথেষ্ট আছে, আপনি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন ! শুনে জমিদার লাল হয়ে উঠে বললে, হারামজাদা, কথা কইতে শিখেছি বটে— লাগাও জুতি । এই বলে এক চোট অপমান তো হয়েই গেল, তার পরে এক-শো টাকা জরিমানা - এরাই সন্দীপের পিছনে পিছনে চীৎকার করে বেড়ায়, বন্দেমাতরং ! এরা দেশের সেবক । काश्र(छद्र की श्ल ? পুড়িয়ে ফেলেছে। সেখানে আর কে ছিল ? লোকের সংখ্যা ছিল না, তারা চীৎকার করতে লাগল, বন্দেমাতরং । সেখানে সন্দীপ ছিলেন ; তিনি একমুঠো ছাই তুলে নিয়ে বললেন, ভাই-সব, বিলিতি ব্যাবসার অন্ত্যেষ্টিসংকারে তোমাদের গ্রামে এই প্রথম চিতার আগুন জ্বলল। এই ছাই পবিত্র, এই ছাই গায়ে মেখে ম্যানচেস্টারের জাল কেটে ফেলে নাগা সন্ন্যাসী হয়ে তোমাদের সাধনা করতে বেরোতে হবে । আমি পঞ্চকে বললুম, পঞ্চ, তোমাকে ফৌজদারি করতে হবে । পঞ্চ বললে, কেউ সাক্ষি দেবে না। কেউ সাক্ষি দেবে না ? সন্দীপ ! সন্দীপ ! সন্দীপ তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললে, কী, ব্যাপারটা কী ? এই লোকটার কাপড়ের বস্তা। ওর জমিদার তোমার সামনে পুড়িয়েছে, তুমি সাক্ষি দেবে না ? সন্দীপ হেসে বললে, দেব বৈকি। কিন্তু আমি যে ওর জমিদারের পক্ষে সাক্ষী । আমি বললুম, সাক্ষী আবার জমিদারের পক্ষে কী ? সাক্ষী তো সত্যের পক্ষে । সন্দীপ বললে, যেটা ঘটেছে সেটাই বুঝি একমাত্র সত্য ? আমি জিজ্ঞাসা করলুম, অন্য সত্যটা কী ? সন্দীপ বললে, যেটা ঘটা দরকার। যে সত্যকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেই সত্যের জন্যে অনেক মিথ্যে চাই, যেমন মায়া দিয়ে এই জগৎ গড়া হচ্ছে। পৃথিবীতে যারা সৃষ্টি করতে এসেছে তারা সত্যকে মানে না, তারা সত্যকে বানায় । অতএবঅতএব তোমরা যাকে মিথ্যে সাক্ষ বল আমি সেই মিথ্যে সাক্ষ দেব । যারা রাজ্য বিস্তার করেছে, সাম্রাজ্য গড়েছে, সমাজ বেঁধেছে, ধর্মসম্প্রদায় স্থাপন করেছে, তারাই তোমাদের বাধা সত্যের আদালতে বুক ফুলিয়ে মিথ্যে সাক্ষি দিয়ে এসেছে। যারা শাসন করবে তারা মিথোকে ডরায় না, যারা শাসন মানবে তাদের জন্যেই সত্যের লোহার শিকল ! তোমরা কি ইতিহাস পড় নি ? তোমরা কি জান না, পৃথিবীর বড়ো বড়ো রান্নাঘরে যেখানে রাষ্ট্রযজ্ঞে পলিটিক্সের খিচুড়ি তৈরি হচ্ছে সেখানে মসলাগুলো সব মিথ্যে ? জগতে অনেক খিচুড়ি পাকানো হয়েছে, এখন