পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ¢७१ হাট আমার চেয়ে তাদের অনেক বেশি যারা ঐ হাট জিনিস কিনতে আসে। उाला प्रिंभि किनिन किनूक-ना। যদি কেনে তো আমি খুশি হব, কিন্তু যদি না কেনে ? সে কী কথা। ওদের এত বড়ো আম্পর্ধ হবে ? তুমি হলেআমার সময় অল্প, এ নিয়ে তর্ক করে কী হবে ? আমি অত্যাচার করতে পারব না । অত্যাচার তো তোমার নিজের জন্য নয়, দেশের জন্যে- “ দেশের জন্যে অত্যাচার করা দেশের উপরেই অত্যাচার করা, সে কথা তুমি বুঝতে পারবে না। এই বলে আমি চলে এলুম। হঠাৎ আমার চোখের সামনে সমস্ত জগৎ যেন দীপ্যমান হয়ে উঠল। মাটির পৃথিবীর ভার যেন চলে গেছে, সে যে আপনার জীবপালনের সমস্ত কাজ করেও আপনার নিরন্তর বিকাশের সমস্ত পর্যায়ের ভিতরেও একটি অদ্ভুত শক্তির বেগে দিনরাত্রিকে জপমালার মতো ফেরাতে ফেরাতে যুগে যুগে আকাশের মধ্যে ছুটে চলেছে, সেইটো আমি আমার রক্তের মধ্যে অনুভব করলুম। কর্মভারের সীমা নেই, অথচ মুক্তিবেগেরও সীমা নেই। কেউ বাধবে না, কেউ বাধবে না, কিছুতেই বাধবে না। অকস্মাৎ আমার মনের গভীরতা থেকে একটা বিপুল আনন্দ যেন সমুদ্রের জলস্তম্ভের মতো আকাশের মেঘকে গিয়ে স্পর্শ করলে । নিজেকে বারবার জিজ্ঞাসা করলুম, হঠাৎ তোমার এ হল কী ? প্রথমটা স্পষ্ট উত্তর পাওয়া গোল না ; তার পরে পরিষ্কার বুঝলুম, এই কয়দিন যে বন্ধন দিনরাত আমার মনের ভিতরে এমন পীড়া দিয়েছে আজ তার একটা মস্ত ফাক দেখা গেল। আমি ভারি আশ্চর্য হলুম। আমার মনের মধ্যে কোনো ঘোর ছিল না। ফোটােগ্রাফের প্লেটে যেরকম করে ছবি পড়ে আমার দৃষ্টিতে বিমলার সমস্ত কিছু তেমনি করে অঙ্কিত হল। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলুম বিমলা আমার কাছ থেকে কাজ আদায় করবার জন্যে বিশেষ করে সাজ করেছে। আজকের দিনের পূর্ব পর্যন্ত আমি কখনোই বিমলাকে এবং বিমলার সাজকে তফাত করে দেখি নি। আজ ওর বিলিতি খোপার চূড়াকে কেবলমাত্র চুলের কুণ্ডলী বলেই দেখলুম ; শুধু তাই নয়, একদিন এই খোপা আমার কাছে অমূল্য ছিল, আজ দেখি এ সন্তা দামে বিকেবার জন্যে প্ৰস্তুত । সন্দীপের সঙ্গে আমার দেশ নিয়ে পদে পদে বিরোধ হয়, কিন্তু সে সত্যকার বিরোধ। কিন্তু বিমলা দেশের নাম করে যে কথাগুলো বলছে সে কেবলমাত্র সন্দীপের ছায়া দিয়ে গড়া, আইডিয়া দিয়ে নয় ; এই ছায়ার যদি বদল হয় ওর কথারও বদল হবে। এই সমস্তই আমি খুব স্বচ্ছ করে দেখলুম, লেশমাত্র কুয়াশা কোথাও ছিল না। আমার সেই শোবার ঘরের ভাঙা খাচাটির ভিতর থেকে যখন সেই হেমন্ত-মধ্যাহ্নের খোলা আলোর মধ্যে বেরিয়ে এলুম, তখন এক দল শালিখা আমার বাগানের গাছের তলায় অকস্মাৎ কী । কারণে ভারি উত্তেজনার সঙ্গে কিচিমিচি বাধিয়েছে ; বারান্দার সামনে দক্ষিণে খোওয়া-ফেলা রাস্তার দুই ধারে সারি সারি। কাঞ্চন গাছ অজস্ৰ গোলাপি ফুলের মুখরিতায় আকাশকে অভিভূত করে দিয়েছে ; অদূরে মেঠো পথের প্রান্তে শূন্য গোরুর গাড়ি আকাশে পুচ্ছ তুলে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, তারই বন্ধনমুক্ত জোড়া গোরুর মধ্যে একটা ঘাস খাচ্ছে, আর-একটা রৌদ্রে শুয়ে পড়ে আছে, আর তার পিঠের উপর একটা কাক ঠোকর মেরে মেরে কীট উদ্ধার করছে- আরামে গোরুটার চোখ বুজে এসেছে। আজ আমার মনে হল, বিশ্বের এই যা-কিছু খুব সহজ অথচ অত্যন্ত বৃহৎ আমি তারই স্পাদিত বক্ষের খুব কাছে এসে বসেছি, তারই আতপ্ত নিশ্বাস ঐ কাঞ্চন ফুলের গন্ধের সঙ্গে মিশে আমার হৃদয়ের উপরে এসে পড়ছে। আমার মনে হল, আমি আছি এবং সমস্তই আছে। এই দুইয়ে মিলে আকাশ জুড়ে যে সংগীত বাজছে সে কী উদার, কী গভীর, কী অনির্বচনীয় সুন্দর। তার পরে মনে পড়ল, দারিদ্র্য এবং চতুরীর ফাঁদে আটকা-পড়া পধু ; সেই পষ্ণুকে যেন দেখলুম। আজ হেমন্তের রৌদ্রে বাংলার সমস্ত উদাস মাঠ-বাট জুড়ে ঐ গোরুটার মতো চোখ বুজে পড়ে আছে- কিন্তু আরামে নয়, ক্লান্তিতে, ব্যাধিতে, উপবাসে। সে যেন বাংলার সমস্ত গরিব রায়তের