পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. Gʻ(Ve রবীন্দ্র-রচনাবলী মেয়েমানুষের দুর্বলতা বলে হাসবে। মেয়েমানুষের দুর্বলতাকে ওরা তখনই মাথা পেতে নেয় যখন সে পৃথিবী মজাতে বসে। অমূল্যকে বললুম, যাও, তোমাকে কিছু করতে হবে না, টাকা সংগ্ৰহ করবার ভার আমারই উপর। যখন সে দরজা পর্যন্ত গেছে তাকে ডাক দিয়ে ফেরালুম ; বললুম, অমূল্য, আমি তোমার দিদি। আজ ভাইফোটার পাজির তিথি নয়, কিন্তু ভাইফোটার আসল তিথি বছরে তিন শো পয়ষটি দিন । আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি, ভগবান তোমাকে রক্ষা করুন । । হঠাৎ আমার মুখ থেকে এই কথা শুনে অমূল্য একটু থমকে রইল। তার পরেই প্ৰণাম করে আমার পায়ের ধুলো নিলে। উঠে যখন দাড়ালো তার চোখ ছলছল করছে। 毫 ভাই আমার, আমি তো মরতেই বসেছি, তোমার সব বালাই নিয়ে যেন মরি- আমা হতে তোমার কোনো অপরাধ যেন না হয় । অমূল্যকে বললুম, তোমার পিস্তলটি আমাকে প্ৰণামী দিতে হবে কী করবে। দিদি ? মরণ প্র্যাকটিস করব । এই তাই দি, মেযেদেরও হতে হবে মারতে হবে। এই বলে অমূল্য পিস্তলটি আমার হাতে অমূল্য তার তরুণ মুখের দীপ্তিরেখা আমার জীবনের মধ্যে নূতন উষার প্রথম-অরুণলেখাটির মতো এঁকে দিয়ে গেল। পিস্তলটাকে বুকের কাপড়ের ভিতর নিয়ে বললুম, এই রইল আমার উদ্ধারের শেষ সম্বল, আমার ভাইফোটার প্রণামী । নারীর হৃদয়ে যেখানে মায়ের আসন আমার সেইখানকার জানলাটি হঠাৎ এই একবার খুলে গিয়েছিল। তখন মনে হল, এখন থেকে বুঝি তবে খোলাই রইল । কের গ্রেহের পথ আবার বন্ধ হয়ে গেল, প্রোসী নারী এসে মাতার স্বায়নের ঘরে তালা লাগিয়ে পরের দিনে সন্দীপের সঙ্গে আবার দেখা । একটা উলঙ্গ পাগলামি আবার হৃৎপিণ্ডের উপর দাড়িয়ে নৃত্য শুরু করে দিলে। কিন্তু এ কী এ ! এই কি আমার স্বভাব ? কখনোই না। এই নির্লজ্জকে এই নিদারুণকে এর আগে কোনোদিন দেখি নি। সাপুড়ে হঠাৎ এসে এই সাপকে আমার আঁচলের ভিতর থেকে বের করে দেখিয়ে দিলে ; কিন্তু কখনোই এ আমার আঁচলের মধ্যে ছিল না, এ ঐ সাপুড়েরই চাদরের ভিতরকার জিনিস। অপদেবতা কেমন করে আমার উপর ভর করেছে ! আজ আমি যা-কিছু করছি সে আমার নয়, সে তারই লীলা । । সেই অপদেবতা একদিন রাঙা মশাল হাতে করে এসে আমাকে বললে, আমিই তোমার দেশ, আমিই তোমার সন্দীপ, আমার চেয়ে বড়ো তোমার আর কিছুই নেই, বন্দেমাতরং ! আমি হাত জোড় করে বললুম, তুমিই আমার ধর্ম, তুমিই আমার স্বৰ্গ, আমার যা-কিছু আছে সব তোমার প্রেমে ভাসিয়ে দেব । বন্দেমাতরং ! পােচ হাজার চাই ? আচ্ছা, পাচ হাজারই নিয়ে যাব। কালই চাই ? আচ্ছা, কালই পাবে। কলঙ্কে দুঃসাহসে ঐ পাঁচ হাজার টাকার দান মদের মতো ফেনিয়ে উঠবে ; তার পরে মাতালের উৎসব ; অচলা পৃথিবী পায়ের তলায় টলমল করতে থাকবে, চোখের উপর আগুন ছুটবে, কানের ভিতর ঝড়ের গর্জন জাগবে, সামনে কী আছে কী নেই তা বুঝতেই পারব না ; তার পরে টলতে টলতে পড়ব গিয়ে মরণের মধ্যে ; সমস্ত আগুন এক নিমেষে নিবে যাবে, সমস্ত ছাই হাওয়ায় উড়বে- কিছুই আর বাকি থাকবে না । টাকা কোথায় পাওয়া যেতে পারে সে কথা এর আগে কোনোমতেই ভেবে পাচ্ছিলুম না। সেদিন তীব্ৰ উত্তেজনার আলোতে এই টাকাটা হঠাৎ চোখের সামনে প্রত্যক্ষ দেখতে পেলুম। ফি বছর আমার স্বামী পুজোর সময় তঁর বড়ো ভাজ আর মেজো ভাজকে তিন হাজার টাকা করে