পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«፩ ዓ O রবীন্দ্র-রচনাবলী থাকে না। দেশে তখন দেশসেবকদের কোনাে সাড়াশব্দ ছিল না, বন্দেমাতরং মন্ত্র তখন নীরব। আর সেই যে আমার কলের জাহাজ— দূর হােক সে-সব কথা তুলে লাভ কী ? দেশহিতের যে আগুন ওরা জ্বালালে তাতে আমারই কুশপুত্তলি দগ্ধ হয়ে যদি থামে। তবে তো রক্ষা। এ কী খবর ! আমাদের চকুয়ার কাছারিতে ডাকাতি হয়ে গেছে! কাল রাত্রে সদর-খাজনার সাড়ে সাত হাজার টাকার এক কিস্তি সেখানে জমা হয়েছিল, আজ ভোরে নীেক করে আমাদের সদরে রওনা হবার কথা ! পাঠাবার সুবিধা হবে বলে নায়েব ট্রেজরি থেকে টাকা ভাঙিয়ে দশকুড়ি টাকার নােট করে তাড়াবন্দি করে রেখেছিল। অর্ধেক রাত্রে ডাকাতের দল বন্দুক-পিস্তল নিয়ে মালখানা লুটেছে। কাসেম সর্দার পিস্তলের গুলি খেয়ে জখম হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় এই ডাকাতেরা কেবল ছ হাজার টাকা নিয়ে বাকি দেড় হাজার টাকার নোট ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ফেলে চলে এসেছে। অনায়াসে সব টাকাই নিয়ে আসতে পারত। যাই হােক, ডাকাতের পালা শেষ হল, এইবার পুলিসের পালা আরম্ভ হবে। টাকা তো গেছেই, এখন শান্তিও থাকবে না । বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি সেখানে খবর রটে গেছে। মেজোরানী এসে বললেন, ঠাকুরপো, এ কী সর্বনাশ ! আমি উড়িয়ে দেবার জন্য বললুম, সর্বনাশের এখনো অনেক বাকি আছে। এখনো কিছুকাল খেয়ে পরে কাটাতে পারব | না ভাই, ঠাট্ট নয়, তোমারই উপর এদের এত রাগ কেন ! ঠাকুরপো, তুমি নাহয় ওদের একটু মন রেখেই চলো-না ! দেশসুদ্ধ লোককে কি দেশসূদ্ধ লোকের খাতিরে দেশকে সুদ্ধ মজাতে পারব না তো । এই সেদিন শুনলুম নদীর ধারে তোমাকে নিয়ে ওরা এক কাণ্ড করে বসেছে ! ছিছি ! আমি তো ভয়ে মারি ! ছোটােরানী মেমের কাছে পড়েছে, ওর তো ভয়ডর নেই— আমি কেনারাম পুরুতিকে ডাকিয়ে শান্তিস্বস্তায়নের বন্দোবস্ত করে দিয়ে তবে বাচি । আমার মাথা খাও ঠাকুরপো, তুমি কলকাতায় যাও— এখানে থাকলে ওরা কোন দিন কী করে বসে । মেজোরানীদিদির ভয়-ভাবনা আজ আমার প্রাণে সুধা বর্ষণ করলে । অন্নপূর্ণ, তোমাদের হৃদয়ের দ্বারে আমাদের ভিক্ষা কোনোদিন ঘুচিবে না । ঠাকুরপো, তোমার শোবার ঘরের পাশে ঐ-যে টাকাটা রেখেছি ওটা ভালো করছি না। কোন দিক থেকে ওরা খবর পাবে আর শেষকালে— আমি টাকার জন্যে ভাবি নে ভাই, কী জানি— আমি মেজোরানীকে ঠাণ্ড করবার জন্যে বললুম, আচ্ছা ও টাকাটা বের করে এখনই আমাদের খাতাঞ্জিখানায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরশুদিনই কলকাতার ব্যাঙ্কে জমা করে দিয়ে আসব। এই বলে শোবার ঘরে ঢুকে দেখি পাশের ঘর বন্ধ। দরজাটা ধাক্কা দিতেই ভিতর থেকে বিমলা বললে, আমি কাপড় ছাড়ছি । মেজোরানী বললেন, এই সকলেবেলাতেই ছোটােরানীর সাজ হচ্ছে! অবাক করলে ! আজি বুঝি আর-একটু পরে এসে সব ঠিক করা যাবে এই বলে বাইরে এসে দেখি সেখানে পুলিস-ইনসাপেক্টর উপস্থিত । জিজ্ঞাসা করলুম, কিছু সন্ধান পেলেন ? সন্দেহ তো করছি । কাকে ? ঐ কাসেম সর্দারকে । সেকি কথা ! ও-ই তো জখম হয়েছে । জখম কিছু নয় ; পায়ের চামড়া ঘেঁযে একটুখানি রক্ত পড়েছে, সে ওর নিজেরই কীর্তি । কাসেমকে আমি কোনোমতেই সন্দেহ করতে পারি নে, ও বিশ্বাসী ।